দুর্গা পূজার কাজ শুরু হয়েছে। তোড়জোড় জোর কদমে চলছে। আমার ওপরেও দায়িত্ব পড়েছে, কিছু কাজের। সেই কাজের সবটা বুঝে নেওয়ার জন্যই গিয়েছি মহারাজের ঘরে।
গিয়ে দেখি, খাটে বসে মহারাজ মা এর শাড়ীর ধরণ বাঁচ্ছেন, মোবাইলেই কোন একটা শপিং অ্যাপে।
কাজের বিষয়ে কথা শুরু হয়েছে। কাজ বুঝতে বুঝতে প্রসঙ্গত কুমারীর কথা উঠলো। জ্ঞান পীঠে এবার কুমারী পূজা হবে। কুমারী খোঁজা চলছে। চলছে, সপ্তম অনুর্ধ্বা কোন এক নবীন প্রাণের খোঁজ, যার মধ্যে প্রকাশিত হবে তাঁরই সরলতা..
প্রতিবছর মা যখন আসেন তখন কি সুন্দর সেজে ওঠে চারিদিক.. আর উঠবে নাই বা কেন, তিনিই তো স্বয়ং বিশ্ব প্রকৃতি। খুব ইচ্ছা হল কুমারীকেও এবার এমন ভাবে সাজাই।
গলায় বেল ফুলের মালা, কানে বেল ফুলের দুল, হাতে বেল ফুলের বালা, কপালে চন্দন, চোখে আলতো করে কাজল.. ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্ত মহারাজকে বলতেই সব ভাবনা শেষ হয়ে গেল।
মহারাজ বললেন, অত শত করতে হয় না। শুধু কপালে একটা সিঁদুরের টিপ। ব্যস্!!
একটু ভেঙেই গেল মনটা! মনে হলো ধুর! ভালো লাগে না! কত আশা ছিল, ফুলের মালা গাঁথবো, সুন্দর করে সাজাবো আমার ছোট্ট মাকে!
কিন্তু এরপর মহারাজের মুখের কথাগুলো এমন ভাবে মনকে নাড়িয়ে দিল, যে ইচ্ছে গুলো উধাও হয়ে গেল নিমিষেই ।
মহারাজ বললেন: এতো সাজ দিয়ে কি হবে শুনি! কান ফোটাও, নাক ফোটাও.. লম্বা চুল রাখো! কেন মেয়েদের এতো সাজতে হবেই বা কেন? কার জন্য?
তাদের আন্তরিক সৌন্দর্য কি যথেষ্ট নয়? বাইরের আর্টিফিসিয়াল বাজারী কতগুলি প্রোডাক্ট দিয়েই সুন্দরী হতে হবে? মেয়েদের কি প্রকৃতি সুন্দর বানায়নি, যে বাইরের রং কালি তাদের সুন্দর বানাবে!
যার অন্তর সুন্দর, তার বাইরেটাও তেমনই সুন্দর। তার আন্তরিক সরলতা, সৌন্দর্যই তাকে বাইরে থেকেও সুন্দরী করে তুলবে..
মহারাজ যখন বলেন, আমি হাঁ হয়ে শুনি কথাগুলো আর মাঝে মাঝে ভাবি.. চিন্তার এমন গভীরতা কেন আমাদের আসেনা! কি করতে হয়, এমন গভীর প্রেমের আধার হতে হলে? বাইরে থেকে আচরণে যতটাই কঠোর, অন্তর যেন ততটাই প্রেমের কোমলতায় পরিপূর্ণ..
আফসোস হয়, এই মুহূর্ত অবধি এমন চিন্তার গভীরতার এক কণাও অন্তরে জাগিয়ে তুলতে না পারার জন্য! আশা জাগে এমন হয়ে ওঠার জন্য লড়াই করার।
আপনাদেরও কি এমনই ইচ্ছা হয়???