March 31, 2022 - BY Admin

"আমার কাজ আছে"

"আমার কাজ আছে"


জীবনে এমন অনেক সময় আসে, যখন পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূল হয় যে, হাজার চেষ্ঠা করলেও তাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। যদিও পরিস্থিতি কখনোই কারোর নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয় নয়, তাই সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির উর্ধ্বে রাখতে হয় নিজেকে, স্পর্শিত হতে দিলেই আপনি পরিস্থিতির শিকার। এমন সময়গুলিতে গীতা এবং গুরু জ্ঞান মনের অন্ধকার নাশ করতে যে কতটা সহায়ক হয়, তা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। দুই জ্ঞানই মূলত এক। দুইই, গুরুর তাঁর শিষ্যের প্রতি প্রেম থেকে নির্গত জ্ঞান, যা তাকে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালানোর নয়, বরং বীরের মত লাভ ক্ষতির অঙ্ক না কষে লড়াই করার শিক্ষা দিয়ে যায়।


মাত্র কয়েকটা দিন আগেই  'ব্রহ্মচর্য'-র ব্রত নিয়েছি।

স্বভাবতই মন নানা কারণে শঙ্কিত। পরিস্থিতিও সব ক্ষেত্রে অনুকূল নয়। এমন সময় জানতে পারি, একই সাথে অপরজন যিনি ব্রহ্মচর্য ব্রত গ্রহণ করেছিলেন, তিনিও তা ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন। ব্রহ্মচারিণী আমি একা। অর্থাৎ যুদ্ধ আরেকটু কঠিন আগের চেয়ে।


মন ভাঙবো ভাঙবো করছে, নানান কারণে চোখে জল টলমলে.. এমন সময় মহারাজকে আবেগী  হয়ে জিজ্ঞাস করেছিলাম, কেন হয় এমন, আমারই সাথে বারবার!

চূড়ান্ত অজ্ঞানতা থেকে বেড়িয়েছিল এমন প্রশ্ন। তখন না বুঝলেও, আজ অনুভব করি কিছুটা..


অর্জুনের হালও বিষাদ যোগে হয়তো কিছুটা এমনতরই ছিল। যার ঘোর শ্রীকৃষ্ণের --


 'ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতত্ত্বয্যুপপদ্যতে ৷

  ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ'৷৷ - র চাবুকে অনেকটাই কেটে গিয়েছিল।

গুরুবাক্য সেদিন আমাকেও এইভাবেই বাঁচিয়েছিল। 


 আমার প্রশ্ন শুনে মহারাজের তীব্র ভর্ৎসনা! 

 "না, মানে আমি তো এটাই ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি যে এখানে তোমার গুরুত্ব কিভাবে এত বড়ো হয়ে যায়? 'আমার দুঃখ', 'আমার কষ্ট' - এত 'আমি' কিসের ?  'আমি'-কে ভাঙতেই তো এই জীবন! এত 'আমি'-কে নিয়ে ভাববার সময় পাচ্ছ কিভাবে? 

 দুঃখ সুখ এসব part of life, এগুলি যাবে আসবে। নিজেকে সঠিক কাজ দাও মধুরিমা। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হচ্ছ মানে জীবনে সঠিক কোন কাজ নেই। যদি সঠিক আদর্শে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হয়, তবে নিজের ব্যক্তিগত সুখ দুঃখে এত ভেঙে পড়লে চলবে না। পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে দুফোঁটা জল চোখের কোণায় এসে গেল, সাথে সাথে তা মুছে নিয়ে নিজেকে বলবে ' আমার কাজ আছে! উঠে পড়বে তৎক্ষণাৎ, কাজ নিয়ে বসবে। যা সঠিক তার জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ ঘষে দেওয়াই সাধনা।'


আমাদের এই 'আমি'ই যে কত বড় শত্রু আমাদের তা বেশ বুঝেছি। তবু ভুল হয়ে যায়, অভ্যাস করতে হয়। বারবার এই 'আমি'-কে বলতে হয়, 'আমার কাজ আছে!'