দিনটি শুক্রবার, এক যুবক ভক্ত মহারাজের সাথে অদ্বৈত জ্ঞান পীঠে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন ।যুবক, মহারাজের সাথে আগে দুইবার দেখা করেছেন, এইবার তিন নম্বর। আগে দুইবার দেখা করলেও, মহারাজের সামনে সাহস করে তার মনের ভাব পরিস্কার করে বলতে পারেনি। তাই এইবারে সে একেবারে প্রস্তুত হয়ে এসেছেন যাতে সে তার মনের ভাব পরিস্কার করে মহারাজের সামনে উপস্থাপিত করতে পারে।
যুবক ভক্ত মহারাজের সাক্ষাৎ কক্ষের মধ্যে বসে আছেন। মহারাজ নির্দিষ্ট সময় বিকাল ৪ টার সময় ভক্তের সামনে এলেন এবং বললেন ,"কেমন আছো?" এবং এরমধ্যে দিয়েই কথোপকথন আরম্ভ হল।
ভক্ত:- মহারাজ আমি 2015 সাল থেকে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্য পড়ছি ও বুঝছি। 2018 সালে আমার দীক্ষা হয়। আমি নিয়মিত ধ্যান-জপ করছি কিন্তু কিছুতেই আমার কাম, ক্রোধ, লোভ যাচ্ছে না। বিশেষ করে ঈর্ষা যেন আমাকে প্রচন্ডভাবে বদ্ধ করে রেখেছে।
মহারাজ:- দেখো, তুমি জিনিসটাকে ভুলভাবে বুঝছো। কাম, ক্রোধ, লোভ ঈর্ষা যাইই বলছো, এটা কিছু extent পর্যন্ত তোমার জীবনে শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে। যেহেতু তোমার শরীর আছে। অতিরিক্তটা আসে অজ্ঞান থেকে। দেখো, তুমি চাকরির জন্য চেষ্টা করছো, কিন্তু পাচ্ছো না। যে চাকরি পেয়েছে তার প্রতি তোমার ঈর্ষা হচ্ছে। কেন?- তুমি ভাবছো যে, সে জীবনে বিশেষ কিছু পেয়ে গিয়েছে। তুমি সেটা পাওনি। তুমি যদি ভালো করে observe করো দেখবে যে, সে চাকরি করে যন্ত্রণায় ফেঁসে আছে। চাকরি করার সাথে সাথে ভীষণভাবে তার ঘরের responsibility তার ঘাড়ে চেপে বসে আছে। দেখো, যেটা তোমার নেই! এইটা দেখে, তুমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করো। উপার্জনের জন্য চাকরি করতে হবে, আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু ঈর্ষা তখন হয়, যখন মনে হয় আমার থেকে বেশি কিছু কেউ পেয়ে গেল। কোথায় বেশি পেল?তোমার থেকে বেশি সমস্যা পেল। তোমার এই "সমস্যার" জন্য ঈর্ষা হচ্ছে?
তোমাদের ধারণা কি হয়ে যায় যে, তোমরা ভাবো কাম, ক্রোধ, লোভ vanish হয়ে যাবে। vanish কখনোই হবে না। এটা ভালো করে বুঝে নাও। এইগুলো কে গুরুত্ব দিও না। থাক পড়ে যেমন আছে। যেমন এখানে এই জানালার পর্দা গুলো পড়ে আছে, কত গুরুত্ব দিই এগুলোকে? দিনে কতবার দেখি এর দিকে? ঈর্ষা থাকল মনের এক কোণে। ঈর্ষা কার উপরে করবে, Higher জিনিসের উপরে করবে ,তাই না?
ভক্ত:- মহারাজ ঈর্ষার বস্তুগুলোর সঙ্গে তো কিছু attachment আছে। For example আমি একটি গাড়ি কিনতে চাই কিন্তু সামনের জন যখন সেই গাড়িটা কিনে ফেলে বা কিনে ফেলেছে ।আমি কোন কারণে সেটি কিনতে পারছি না। তখনো তো ঈর্ষা হবেই?
মহারাজ :- তোমার গাড়ির ইচ্ছা আছে। তুমি সেটা পূর্ণ করে নাও। অন্যেরটা দেখে কেন ঈর্ষা করতে যাচ্ছ? তুমি ভাবছো, ওই গাড়িটা কিনে বিশেষ কিছু করে ফেলেছে জীবনে। জিনিসটা তোমার দেখা হয়নি practically। তোমার ৭০ হাজার টাকার গাড়ি আর তার ১.৫ লাখ টাকার গাড়ি। practically দুই গাড়ির মধ্যে দেখে নাও, সে কি সমস্যার মধ্যে ফেঁসে আছে। ওই ১.৫ লাখ টাকার গাড়ি তার হয়তো রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কারণ সে কিনে ফেঁসে গিয়েছে। তার আর কিছু করার নেই। ওই গাড়ি দেখে তোমার ঈর্ষা হচ্ছে! তুমি জানো না যে, ওই গাড়ি কিনে কিভাবে সে ভুগছে। তুমি ভুল ধারণাই আছো যে, সে আনন্দে আছে। কিন্তু তোমার এই ভুল ধারণা তুমি practically তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে কাটাও। দেখবে তুমি সম্পূর্ণ ভাবে ভুল ধারণাই আছো।
ভক্ত নিজের ভুল বুঝতে পেরে, মনে মনে নিজের কাছে সংকল্প করলেন যে, মনের এই ভুল ধারণাকে পরিবর্তন করতেই হবে।