March 30, 2022 - BY Admin

"প্রকৃত সত্ত্বগুণীর লক্ষণ কি"

"প্রকৃত সত্ত্বগুণীর লক্ষণ কি"


রবিবারের সন্ধ্যা। যোগবাসিষ্ঠের class – এর পরে কয়েকজন ভক্ত মহারাজের কাছে এসেছেন বিভিন্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে। কেউ কেউ আবার train ধরার জন্য তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন অবস্থায় থাকা ভক্তদের দিক থেকে কত রকমের প্রশ্ন আসতে থাকে। আর মহারাজ অক্লান্ত ভাবে একের পর এক জীবন জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়ে যান। 


একজন যুবক ভক্ত মহারাজকে সত্ত্বগুনের লক্ষণ সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন করছিলেন--


ভক্ত – মহারাজ, ‘সাধু’ বললেই আমদের মাথায় প্রথম ছবি আসে – হিমালয়ের গুহায় জটাধারী কেউ একজন বসে আছে। জগতের কোন কিছুর সঙ্গে তার কোন লেনাদেনা নেই। প্রকৃত সত্ত্বগুনের বিকাশ হলে কি সব মানুষই এরকম হয়ে যায়?


মহারাজ – সত্ত্বগুন যখন বিকশিত হয়, খুব tendency থাকে যে সে এক side হয়ে যেতে চায়; চুপ হয়ে যেতে চায়। চুপ বলতে শুধু যে মুখটা চুপ করে থাকবে তা নয়। দুটো দিকই আমি বলছি – প্রথমে স্থূলভাবে এবং তারপরে সূক্ষ্মভাবে। আমরা চুপ মানে যে চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে পড়া বুঝি তাকে আসলে চুপ বলে না। কেউ প্রচুর প্রচুর কথা বলেও চুপ থাকতে পারেন। নিস্তব্ধতা সেখানে যেখানে বৃত্তির ঢেউ খেলেনা, যেখানে বারবার ব্যক্তি জেগে ওঠে না। আমাদের মধ্যে ব্যক্তি জেগে ওঠে বারবার যে আমার কিছু চাই। যার মধ্যে এই চাই কথায় কথায় জেগে ওঠে না সে নিশ্চুপ, সে নিস্তব্ধ। হতে পারে সে মহাকর্ম  করছে, বিরাট কর্ম করছে। কিন্তু যার মনে ভিড় নেই, যার চিত্তে খচরমচর খচরমচর রাতদিন চলছে না তাকেই স্তব্ধ বলতে হবে। তাকেই নির্জন বলতে হবে। 



দেখবেন সংসারে অনেক লোক আছে যারা খুব কম কথা বলে। কিন্তু তার মনটা যদি খুলে দেখতে পারতেন দেখতেন ভেতরে বাজার বসে আছে। আমি এমন কিছু মানুষকে দেখেছি – যাদের সবাই খুব পছন্দ করে। যেখানেই যায় সেখানেই সবাই তার খুব favour-এ চলে যায়। আমি প্রথম প্রথম মেলাতে পারতাম না। ভাবতাম -হতে পারে আমি ভুল; আমি তো অহংকারের থেকে আলাদা কিছু নই। তারপরে দেখলাম – সিম্পাঞ্জির থেকেও বেশি মন ছটফট করছে। ভিতরে যন্ত্রণা। কিন্তু দেখলে একদম বোঝা যাবে না। আমি ব্যক্তিকে খারাপ বলতে চাইছি না। আমি বলতে চাইছি there is a difference। Don’t judge by the cover page। কিন্তু আমরা যেহেতু স্থূলের পুজারি, আমরা বাইরে থেকে যাকে চুপ থাকতে দেখি ভাবি সেই শান্ত। তাহলে তো রামকৃষ্ণদেবের মতো বকাটে কেউ ছিল না। ডাক্তার বলেছে গলায় cancer হয়েছে, চুপ থাকতে। তবুও বকেই চলেছে বকেই চলেছে!! কিন্তু তার মতো আন্তরিক নিস্তব্ধতা আর কোথায় ছিল! 


যখনই আপনার ভিতরে কিছু অস্পর্শীত থাকে আপনি তখন যথার্থ ভাবে নির্জন হন। সেটা বাজারের মধ্যেও হতে পারে। 


ভক্ত – তার মানে মহারাজ আপনি বলতে চাইছেন – যে বাইরে থেকে শান্ত হলেও সবসময় কিছু চাইছে সে আসলে শান্ত হতে পারে না।


মহারাজ – যে সবসময় কিছু চাইছে সে বাজারেই দাঁড়িয়ে আছে। বাজারেই তো লোকে চায়। বাজারে গিয়ে চুপ বসে থাকলে তাকে পাগল বলা হবে। বলবে – আপনার কিছু লাগবে? নাহলে আমাদের কিনতে দিন। আমাদের মনে যদি সবসময় থাকে কিছু চাই তাহলে মনে বাজারই বসে আছে। স্থূল চুপ করাকেই চুপ করা ধরবেন না। 


আত্মজ্ঞ পুরুষ কাকে বলা হবে? যে তার আত্মার কেন্দ্র থেকে সরছে না। কিছুতেই তাকে আপনি সরাতে পারবেন না, কথার কেন্দ্র বদলাতে পারবেন না। ঘুরেফিরে ঘুরেফিরে চলে আসবে একই জায়গায়। ময়রা ঘুরেফিরে মিষ্টিতে চলে আসবে। ঠাকুর বলতেন গাঁজাখোর গাঁজাখোর কে দেখে খুশি হয়। সেরকম সে নিশ্চুপ যার সঙ্গে আপনি নিশ্চুপ হয়ে যান। কোন শব্দ আপনাকে চুপ করিয়ে দেয় সেই শব্দের কাছে যান। যে শব্দ আপনার ভিতরের ভিড়কে বাড়ায় তার থেকে দূরে থাকুন।