"মনের কারসাজি-তে গুরুর কৃপা"
ঘড়িতে বাজে সকাল ৯-টা। আশ্রম এর নিয়ম মত, ব্রহ্মচারী রুদ্রজিত মহারাজ অবিলম্বে জলখাবারের ঘন্টা বাজিয়ে সবাইকে alert করে দিয়েছেন। সবাই যে যার মত জলখাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
হঠাৎ এক ব্রহ্মচারী মহারাজ বলে উঠলেন যে তিনি খাবেন না। মাঝে মাঝেই ব্রহ্মচারী মহারাজের এই না খাওয়ার ব্যারাম লেগেই থাকে। সঙ্গে সঙ্গে মহারাজ উত্তেজিত হয়ে গিয়ে প্রচণ্ড বকাঝকা করলেন ও ব্রহ্মচারীকে বারবার না খাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করায়, ব্রহ্মচারী মহারাজ বললেন যে, তার নিরামিষ খাবার খেতে অত ভালো লাগে না। তিনি একটু মুখরোচক টেস্টি খাবার খেতে ভালোবাসেন। বেশ কিছুক্ষণ পর মহারাজ আবার তাকে ভালবেসে তার প্রেম দিয়ে তাকে কাছে ডেকে নিয়ে খাওয়ালেন।
কিছুক্ষণ পরে আমি মহারাজের ঘরে গিয়ে মহারাজকে জিজ্ঞাসা করলাম ব্রহ্মচারী মহারাজের না খাওয়ার জন্য ওনাকে এত বকাঝকা করার সত্যিই কি কারণ ছিল?
মহারাজ বললেন, দ্যখ্! জিভ taste (স্বাদ) বোঝে। জিভ লোভ হিংসা এই বৃত্তি গুলোকে বোঝে না। এটা শুধু মাত্র একটাই ইন্দ্রিয় বা মনের instrument হিসাবে কাজ করে। মনেতে বিভিন্ন বৃত্তি ওঠে যেমন- এই লোভ হিংসা বিদ্বেষ ইত্যাদি। যখন কেউ মাছ মাংস খাচ্ছে তখন তার মনেতে কেটে খাওয়ার লোভ, হিংসা বৃত্তিগুলো passively ওঠে। কারণ, উপর থেকে দেখলে তা মাত্র ভালো লাগা বা খিদে। তাই সেটা ব্যক্তি বুঝতে পারে না। যখন কারও মনে এই বৃত্তিগুলো উঠছে, অথচ মাছ-মাংস খেতে পারছে না, বা দমন করার চেষ্টা হচ্ছে তখন মনের এই বৃত্তিগুলো অন্য কোন মাধ্যমে manifest হতে চায়। ব্রহ্মচারী মহারাজের ক্ষেত্রে, ব্রহ্মচারী না খেয়ে নিজের শরীরকে কষ্ট দিচ্ছে অর্থাৎ মনের ওই হিংসা বৃত্তির-ই re-action হচ্ছে, যেটা ব্রহ্মচারী মহারাজ বুঝতে পারছেন না।
তারপর মহারাজ একটি আরও ভালো উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন- এই যে ছেলেমেয়েরা প্রেমে আঘাত পেয়ে সুইসাইড করে, এটা ওই বৃত্তির-ই re-action- এর ফলাফল মাত্র। একটা দেহ অপর একটা দেহকে হিংস্রভাবে ভোগ করতে চায়। নাহলে লিঙ্গভেদই প্রেমের মাপদন্ড হতো না। কিন্তু Break Up- এর পর ওই দেহভোগ-এর ইচ্ছা মেটাতে না পেরে এই হিংস্রতা নিজের শরীরের মধ্য দিয়ে মেটাতে চায়। তাই নিজের শরীরকে কষ্ট দিয়ে Suicide করে, হাত কাটে, খাওয়া বন্ধ, স্বাস্থ্যহানি। এসব একই বৃত্তির প্রতিক্রিয়া। সব-ই মনের কারসাজি। এইজন্যেই মনকে চালনা করতে তীব্র বিচার ও বিবেকী হওয়া প্রয়োজন, না হলে মনের এই বৃত্তি গুলোর খেলা থামবে না।
তারপর ব্রহ্মচারী মহারাজের কথায় পুনরায় ফিরে এসে মহারাজ বললেন - ও দিনের পর দিন না খেয়ে শরীরে একটা বড় অসুখ বাঁধাবে। যার ফলে ওর এই সৎ মহত্ত্বর সাধু জীবনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর ও সেটা বুঝতে পারছে না। ওর না খাওয়াটা ওর মনের বৃত্তিগুলোর নোংরা খেলা মাত্র। বৃত্তিতে আমরা পশু। অন্যকে না পেলে নিজের দেহকেই অত্যাচার করবে। এতে inactive থাকতে হয়। ওর মধ্যে এখনও সেই তীব্র বিবেক ও বিচারবোধ আসেনি। তাই যতদিন না হচ্ছে, ততদিন আমার কাজ- মনের ওই নোংরা খেলা থেকে তোমাদের বাঁচানো। সেটা তোমাদের মেরে হতে পারে, বকাবকি করে হতে পারে, আবার কখনও ভালোবেসেও হতে পারে।