"মনের চোরামি থেকে বাঁচতে গুরুর চরণে সমর্পণ"
দিনটি শনিবার। মহারাজের কঠোপনিষদ্ ক্লাস শুরু বিকেল চারটে থেকে। এই ক্লাসের এক নিয়মিত ছাত্র তথা অদ্বৈত জ্ঞান পীঠ- এর খুব কাছের ভক্ত সোমনাথ মজুমদার। সোমনাথ দা প্রতি সপ্তাহের শনিবারে অফিস করে অদ্বৈত জ্ঞান পীঠ দৌড়ে চলে আসে সুদূর কৃষ্ণনগর থেকে শুধুমাত্র মহারাজের সান্নিধ্য এবং মহারাজের ক্লাসগুলো করার জন্য। তারপর রবিবারে শেওড়াফুলি তে যোগবাশিষ্ঠসারঃ ক্লাস। পরের দিন অর্থাৎ সোমবার ভোরে ট্রেন ধরে আবার কৃষ্ণনগর, আবার হসপিটাল-এ duty. এইভাবে সপ্তাহের পাঁচটা দিন গৃহস্থ জীবন এবং বাকি দুটি দিন আশ্রমিক জীবন চক্রাকারে চলতে থাকে।
এইভাবে কোন এক সপ্তাহে সোমনাথ দা বিশেষ কারণে আশ্রমে শুক্রবারে এসে উপস্থিত এবং ঠিক করে রবিবারে যোগবাশিষ্ঠসারঃ ক্লাস কিছুটা করে বিকেলের ট্রেন ধরে সোজা কৃষ্ণনগর। কারণ পরের দিন সোমবার কোন পলিটিক্যাল পার্টি strike ঘোষণা করার ফলে ঐদিন যানবাহনের problem হতে পারে। কিন্তু সোমনাথদা-কে মহারাজ খুব স্নেহ করেন তাই মহারাজ ও সকল আশ্রমিক বৃন্দ চাইছিল না যে সোমনাথ দা ওই দিন চলে যাক।
যাইহোক, কথামতো সোমনাথ দা ব্যাগ pack করে বাড়ি যাওয়ার জন্য ready হয়ে রবিবার বিকেলে শেওড়াফুলিতে স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ আশ্রম-এ যোগবাশিষ্ঠসারঃ - এর ক্লাসে উপস্থিত।
মহারাজ ক্লাস করাচ্ছেন শেওড়াফুলিতে। যোগবাশিষ্ঠসারঃ-এর ক্লাস করাতে করাতে মহারাজ উদাহরণ দিতে গিয়ে সোমনাথ দার কথা উদাহরণ দিয়ে বলে- "এই যে সোমনাথ বাড়ি যাবে বলে ready হয়ে বসে আছে কে জানে যে ও সত্যি-ই বাড়ি পৌঁছাবে কিনা? বাড়ি যাওয়াটা কি ওর হাতে আছে? এই জগত তাঁর ইচ্ছাতেই চলছে কিন্তু আমরা মিছে ভাবি যে আমরা সব কিছুর কর্তা আমরা সবকিছু change করতে পারি। এই মুহূর্তটুকু যা আপনি সচেতনভাবে বোধযুক্ত হয়ে কাটাচ্ছেন, সেটুকুতেই আপনি আছেন ও কি চলছে বুঝতে পারবেন। বাকি না কিছু জানতে পারবেন, না গাইড করতে পারবেন। অথচ মনে হবে life predictable. এটাই বড় মজাও বটে, সাজাও বটে।আপনার উপর নির্ভর করছে, জীবন কেমন হবে"।
মহারাজের এই উদাহরণ শুনেই সোমনাথ দা হঠাৎ মাথানিচু করে কি যেন ভাবতে শুরু করল এবং কিছুক্ষণ পরে সোমনাথ দা-কে কটার ট্রেনে ফিরবে জিজ্ঞাসা করায়, সোমনাথ দা বলে আজ আর আমি বাড়ি যাব না। এরপর মহারাজের ওপর শ্রদ্ধা রেখে বলে যে, মহারাজ চাইছেন না যে আমি বাড়ি যাই আর মহারাজের কথা আমি অমান্য করে বাড়ি যেতে পারবো না। তারপর সোমনাথ দা ওইদিন রাতে থেকে পরের দিন ভোর বেলা বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
পরে এক ব্রহ্মচারী, মহারাজ কে সোমনাথ দা কে বারবার বাড়ি যাওয়া আটকানোর কারণ জিজ্ঞাসা করায় মহারাজ বলেন, সোমনাথের বাড়ি যাওয়া বা না যাওয়া, আশ্রম এ থাকা বা না থাকা কোন মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয়টি হল চেতনার উন্নতি হচ্ছে কি? ও বাড়িতে থাক বা আশ্রমে থাক তার চেতনার উন্নতি হচ্ছে কি সেটা মূল বিষয়? যদি বাড়িতে থেকে চেতনার উন্নতি হয়, তাহলে আমি বলব আশ্রমে আসতে হবে না, বাড়িতেই থাক। কিন্তু তা তো হচ্ছে না!! তবে কেন বারবার ছুটে আসা আশ্রমে? ভেতরে তো কিছু খচখচ করছে!!!! এখানে দুদিন আশ্রমিক জীবন যাপন করে চেতনা যতটা ঊর্ধ্বগামী হয়, বাকি পাঁচ দিনের গৃহস্থ জীবনে তা আবার নিম্নগামী হয়ে যায়। সময় তো পেরিয়ে যাচ্ছে!! তাহলে এগোবে কখন? মন বড় পাজি জিনিস, যদি একে না বোঝো। যদি বোঝো, এই ভবপার করে দেবে। মন বা অহংকার মিথ্যাতে বাঁচে।সত্য হজম হয় না, তাই হিসাব চাইলেই পালাবার চেষ্টা করে। শুধু আশ্রম নয়, যা কিছু উচ্চ তাকে না সাধলে অহং তার সাথে চলবে না।আমি চেষ্টা করি, যতটা পারি তোমাদেরকে তাঁর কাছে এগিয়ে দিতে সাহায্য করতে। কে জানে কাল হয়তো তুমি নেই বা আমি নেই।