নদীর প্রবাহের মতো জীবন ধারা প্রবাহিত হয়, কত স্মৃতি মনের গভীরে থাকে আবার কত মুছে যায়। এমনই এক স্মৃতি যা প্রায় পাঁচ-ছয় বছর আগের কথা, তখন মহারাজের সাথে ফোনে কথা হত। তো একদিন ওনার সাথে কথা হচ্ছে, উনি জিজ্ঞেস করেন ‘জগদ্ধাত্রী পুজোয় volunteer হয়ে যাব কিনা?’
আমি জিজ্ঞেস করলাম; কি কাজ?
উনি বলেন; যেমন ধর চন্দন বাটা, ফল কাটা, বেলপাতা বাছা এই রকম পুজোর কাজ।
আমি- আচ্ছা।
মহারাজ- কিন্তু অত সহজ ভেবোনা, এলে দেখতে পাবে কেউ সারাদিন চন্দন বেটে যাচ্ছে বা কেউ বেলপাতা বেছে যাচ্ছে, তো কেউ পান বানাচ্ছে, তো কেউ অন্য কিছু, তা বলে বাড়ির পুজোর মতো ভেবনা, অনেক নিষ্ঠা সহকারে সব কাজ হয়। একবার ভেবে নাও কিন্তু।
আমি- ঠিক আছে অসুবিধা নেই।
মহারাজ- তুমি কি যেন প্রশ্ন করে ছিলে?(Facebook chat-এ)
আমি- জগৎ আর মায়া বিষয়, মায়া বলতে কি? বুঝতে পারছি না।
মহারাজ - ধরো এই জগতের কোন বস্তু, হয়তো তোমার লেখার পেন; ওটা কিছু দিন আগে ছিল না, এখন আছে, আবার কিছু দিন পরে থাকবে না।
আমি- হুম্।
মহারাজ - এই ভাবে পুরো জগতের যা কিছু দেখছো তা কখন সৃষ্টি হয়েছে, এখন বর্তমানে আছে, ভবিষ্যতে থাকবে না, বুঝতে পারছো।
আমি- হুম্, সবই time bounded।
মহারাজ- হুম্, time bounded, সময় সাপেক্ষে সীমাবদ্ধ, সবই নির্দিষ্ট সময় সাপেক্ষে প্রকাশ পাচ্ছে যা চিরস্থায়ী নয়, এই অচিরস্থায়ীকেই শাস্ত্র মিথ্যা বলেছে। “যা মা সা মায়া” মানে যা নেই অথচ মনে হয় আছে তা মায়া। এই মিথ্যাই মায়া। এবার একটু বোধ সহকারে দেখ, তাহলে দেখবে এই অচিরস্থায়ী জগৎ তা তোমারই মনের কল্পনা মাত্র, যেমন তুমি নিজেকে স্কুলের ছাত্র মনে করলে স্কুল ও তার সাথে যুক্ত সবকিছু নিয়েই তোমার জগৎ হচ্ছে। যেমন তোমার school friends, teachers ইত্যাদি। College-এ উঠলে college friends ও teachers দের নিয়ে তোমার জগৎ হল। কিন্তু তুমি যখন college- এ ছিলেনা তখন তোমার মন, কল্পনায় বা চিন্তায় college ও college সম্বন্ধীয় জগৎ ছিল না। এই ভাবে তুমি ছোট থেকে তোমার মাথায় সঞ্চিত হওয়া কিছু চিন্তা যাকে তুমি তোমার জগৎ মনে করেছো।
আমি - হ্যাঁ, এটা তো ঠিকই, এই জগৎ পরিবর্তনশীল, আর আমার চিন্তা গুলোই আমার জগৎ হচ্ছে।
মহারাজ - কিন্তু একটু লক্ষ্য করো তোমার চিন্তা তরঙ্গ তা পরিবর্তনশীল। তাহলে তোমার চিন্তার জগৎ কিভাবে চিরস্থায়ী হতে পারে?
আমি- আমার চিন্তা সাপেক্ষে!
মহারাজ- হ্যাঁ, দেখো তুমি নিজেকে বাদ দিয়ে তোমার জগৎ কি থাকে? তুমি নাম রূপ উপাধির সাথে নিজেকে যুক্ত করে নিজের জগৎ বানাচ্ছো, এই অচিরস্থায়ী জগৎ- ই মায়া। তুমি তোমার চিন্তা পাল্টালে তোমার জগৎ- ও পাল্টে যাবে।
মহারাজ- হুম্, আমরা একটু ভাবলেই এই পরিবর্তন কে বুঝতে পারি, তবুও কেন আমরা ক্ষনস্থায়ী কে চিরস্থায়ী মনে করি, আমাদের চিন্তা সাপেক্ষে আমাদের জগৎ, তবু আমরা এই পরিবর্তনীয় চিন্তা সাপেক্ষে বার বার দুঃখ ভোগ করি। এই অজ্ঞান কেই মায়া বলা হচ্ছে।
আমি - হুম্, এটা সত্যি, আমরা পরিবর্তনশীল চিন্তাকেই আমাদের জগৎ মনে করছি।