March 29, 2022 - BY Admin

"সোহহম" ও "দাসোহহম"

"সোহহম" ও "দাসোহহম" 



দিনটি সোমবার। আশ্রম এর নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন রাত্রি 9:30 মিনিটে কথামৃত পাঠ করা হয়। আশ্রমের এক সদস্য কথামৃত পাঠ করছে-----


শ্রীরামকৃষ্ণ -  বেদান্তবাদীরা বলে "সোহহম" ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা, আমিও মিথ্যা। কেবল সেই পরমব্রহ্ম আছেন।


ত্যাগীদের বিষয় বুদ্ধি কম। সংসারীরা সর্বদাই বিষয়ে চিন্তা নিয়ে থাকে। তাই সংসারের পক্ষে "দাসোহহম"।


হঠাৎ করে "মহারাজ" পড়ার মাঝখানে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, পড়া হয়ে গেলে আমাকে মনে করিয়ে দিবি "সোহহম", "দাসোহহম" ও নামগুন সংকীর্তন নিয়ে কিছু বলবো। তারপর আবার পড়া শুরু হল ------


পড়া শেষ হলে মহারাজ বললেন, শুধু কথামৃত literally পড়লেই হবে !!!! Practical জীবনে এর implement করতে হবে।


দ‍্যাখ, আমাদের মধ্যে সবসময় দুই অবস্থা বর্তমান। "আত্মা" এবং "প্রকৃতি"। যেখানেই "আত্মা বা ব্রহ্ম" অবস্থা, সেখানে  "সোহহম"। আর যেখানে "জগত বা প্রকৃতি" অবস্থা সেখানে "দাসোহহম"।


অর্থাৎ যখন বিষয় "আত্মা বা ব্রহ্ম", তখন সব সময় সচেতন থাকতে হবে; আর "জগত বা প্রকৃতি" বিষয়ে উদাসীন থাক। যিনি এই বোধ এনে দিয়েছেন, সেই "গুরুর" দাস হয়ে গুরুর আদেশ মত সব কাজ করে যা, নিজের আমি বা প্রাকৃতিক চাহিদা কে উপেক্ষা করে। এটাই "দাসোহহম"।  কিন্তু জগতের মানুষ ঠিক এর উল্টোটা করে। তারা জাগতিক বা প্রাকৃতিক সমস্ত সুযোগ-সুবিধাকে মুখ্য রেখে "আত্মা বা ব্রহ্ম" কে উপেক্ষা করে দেয়। 


যেমন - আমি গভীর রাত পর্যন্ত লেখালেখি করি। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। তবুও ঘুম-কে উপেক্ষা করে আমি আমার লেখালেখি চালিয়ে যাই। এখানে আমার ঘুমটা হলো জাগতিক বা প্রাকৃতিক, যা আমি উপেক্ষা করি বা করার চেষ্টা করি। আর তাঁর ("আত্মা বা ব্রহ্ম") লেখালেখির কাজ আমি চালিয়ে যাই। যেহেতু আমার কাজটি খুব সূক্ষ্ম স্তরের, তাই আমার গুরু-ও সূক্ষ্ম। তাঁর আদেশেই আমার এই কাজ করা। আমি তোদের প্রভূ বা incharge নই। যতদূর আমি দেহ ততদূর আমি তাঁর দাস, আজ্ঞায় কাজ করছি, চেতনার দাবিতে চলতে হবে। তোরাও তাই। যতদূর দেহবোধ আসছে, সংঘের, আমার কথা শুনে যা, দেহকে উপেক্ষা করে। "সোহহম"- কে প্রকাশ কর "দাসোহহম" হয়ে। স্বামীজী তাইই করলেন। বললেন, ঠাকুরের কাজ।


আর "নামসংকীর্তন" !!!!....... হরির নাম গান করলেই যে নামসংকীর্তন হয় আসলে তা একেবারেই না। যেখানেই কোন বিষয়ের মূলকেন্দ্র "আত্মা বা ব্রহ্ম" তাহলে জেনে রাখ তখনই তা নাম সংকীর্তন হচ্ছে। সেটা গান হতে পারে, সেটা কোন আলোচনা হতে পারে, কোন পড়াও হতে পারে। তোরা সত্যের জন্য কষ্ট স্বীকার করলি, তবুও মিথ্যার পক্ষ নিলি না, তখন খোল, করতাল ছাড়াই তাঁর যশোগান করে দিলি, এটাই যথাযথ "নামসংকীর্তন"। অনিত্যে মন না দেওয়া নিত্যের কীর্তিগান। প্রকৃতির দাবির বিদ্রোহ করা আত্মার প্রতি আনুগত্য। এসব নাম সংকীর্তনের সমান।