January 28, 2022 - BY Admin

' কর্তৃত্ব নয়, অকর্তৃত্বের ভাবে প্রেম করো '

' কর্তৃত্ব নয়, অকর্তৃত্বের ভাবে প্রেম করো '


স্থান: অদ্বৈত জ্ঞানপীঠ আশ্রম, দিয়াড়া

 তারিখ: ২০. ১০.২০২১


ব্রহ্মচারী অবস্থায় মন অনেক সময় দুর্বল হয়। প্রকৃতি মনে নানান কুচিন্তার ঢেউ তোলে..  এইই যেন ব্রহ্মচারীর পরীক্ষা। 


কখনো হয়তো এমন কিছু করবার ইচ্ছা হয় যা, একজন ব্রহ্মচারীর জন্য স্মরণ অবধি অনুচিত, আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরানো সম্পর্কের টান বারবার ফিরে ফিরে আসে, মনকে দুর্বল করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সময় নিজেকে ধরে রাখা যায় না, মন মোহগ্রস্থ হয়, নিচের দিকে নামে..


এই সময় একটি শক্ত হাতের প্রয়োজন হয় ,গুরুর প্রয়োজন হয়.. যে টেনে হিঁচড়ে মনকে পরে ঠাতে পারে। 


প্রচলিত ধারার একেবারে বিপরীতমুখী দিয়াড়ার এই ছোট্ট "অদ্বৈত জ্ঞানপীঠ" আশ্রমটি। কারণ এখানে যাইই হয়, সবই হয় প্রেমের পথে।


আশ্রমে আসা অবধি মহারাজকে সর্বক্ষেত্রেই দেখেছি, সকল কিছুকে প্রেম দিয়েই সামলাতে। মাঝেমধ্যে আশ্রমিকদের বলেন, কখনো মনে কর্তৃত্বের জায়গা দিস না। যাইই করিস দেখিস, তাতে যেনো প্রেম থাকে। 


একবার আশ্রমে এক ভক্ত এসেছেন মহারাজ-এর সাথে কথা বলতে। তাঁর ইচ্ছা সেও ব্রহ্মচর্য‍্য নেয়, মানুষের জন্য মহারাজের সান্নিধ্যে থেকে কাজ করে।


এই প্রসঙ্গে মহারাজের সাথে নানান বিষয়ে কথা বলছেন। 


এমন সময় মহারাজের ফোনের স্ক্রিনে একটা নাম্বার ভেসে উঠল। ফোনটা এক আশ্রমিকের। কোন একটি কাজে সে মহারাজকে বারবার ফোন করেই চলেছে। আর প্রতিবারই মহারাজ শান্ত গলায় তাকে একই বিষয়ে নানান কথা বোঝাচ্ছেন। কিছুক্ষণ বিষয়টি দেখতে দেখতে ভক্ত সম্ভবত বিরক্ত হয়েই একটু তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন, আশ্রম এভাবে কি চলবে মহারাজ? একটু কঠোর নিয়ম এর প্রয়োজন.. আপনাকে তো দেখছি, আপনি ওদের যেন একটু বেশীই আদরে রাখেন। তাই এরা ঠিক ঠিক ভাবে নিজেদের কাজ করে না! কড়া শাসনের খুব প্রয়োজন!


মহারাজ এতক্ষণ শান্তভাবে সব শুনছিলেন। এবার বলতে শুরু করলেন। 


দেখুন, খুব পরিষ্কার বিষয়.. আশ্রমগুলি এখন যেভাবে চলছে, তাতে কোথাও কোন প্রেমের ছোঁয়া মাত্র নেই।  হ্যাঁ, ভয় অবশ্যই আছে! 


 হয়তো বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে যে, প্রচুর কাজ হচ্ছে, আশ্রমের আয়তন বাড়ছে, লোক সংখ্যা বাড়ছে, আশ্রমের সম্পত্তিও বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তরোত্তর!-- বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, যেনো বিরাট এক কর্মযজ্ঞ চলছে।

কিন্তু একটু কাছে গিয়ে দেখে আসুন, দেখুন কী চলছে ভেতরে! তারপর কথা হবে..


এসব ক্ষেত্রে, বেশির ভাগ সময়ই ব্যক্তি কিছু নৈতিক নিয়মের মধ্যেই আটকে যায়।

আমি অন্তত এখানে এমনটা চাই না! আশ্রমে ২ লাখ ভক্ত আসুক বা আশ্রম শুধু দুজনকে নিয়ে চলুক, ব্যক্তিগত ভাবে তাতে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই!


 তবে এই আশ্রমে যাইই হবে, তা যেন প্রেমের সাথে হয়। প্রেম না থাকলে ভিতর থেকে আশ্রম যে কখন ভেঙে যাবে.. টেরটিও পাবেন না। এমন আশ্রম যার heart(হৃদয়যন্ত্র)টাই fail(ব্যর্থ) করে গেছে,  বাইরে থেকে তা যতই ঝাঁ চকচকে হোক, থাকা বা না থাকা দুইই সমান!


 এই কারণেই আমি ওদের সব সময় বলি, প্রেমকে সাথে নিয়ে চলতে। প্রেমের অভিব্যক্তি পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিন্ন হতেই পারে, কিন্তু প্রেম যা মূল সত্য-- তা বদলায় না।


এই যে আপনি আমাকে দেখলেন বারবার একটা বিষয়ই আমি বুঝিয়ে যাচ্ছি, অথচ রাগ করছি না। তার কারণ ও বিষয়টা আমার থেকে জানতে চাইছে, ও কিছু বুঝতে চাইছে।


 কিন্তু বারবার বোঝানোর পরও যখন ওরা অসচেতন হয়ে কাজ করে, তখন ওদের মধ্যে কেউ কেউ আমার কাছে এমন বকা খায় যে পাড়ার একটি কাক পক্ষীও তখন আশ্রমের চৌহদ্দির মধ্যে টিকতে পারে না!


যেখানে যেমন প্রয়োজন সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিতে হবে। তবে মনে প্রেমের একটি স্বচ্ছ আধার রাখা প্রয়োজন, না হলে সকলকে একসাথে নিয়ে চলা যায় না। 


আর আশ্রম মানে একটা বিরাট পরিবার, একটা বিরাট কর্মযজ্ঞের কর্মশালা! এই পরিসরে কাজ করতে হলে স্বৈরাচারীতা নয় বরং প্রেমকে জীবনের মূলমন্ত্র বানাতে হবে।


ভক্ত আজও এই কথা মনে মনে স্মরণ করে নিজের মনকে বলে, আহা! কী চরম শিক্ষাই না পেয়েছিলি রে মন! একে কাজে লাগা.. নয়তো এই শিক্ষা এক্কেবারে বৃথা।