June 09, 2024 - BY Admin

অকর্তা এবং অকর্মা

একদিন আমি আন্তরিক  কিছু দন্দ্ব নিয়ে মহারাজের কাছে গেলাম, সমাধানের জন্য।


আমি -  মহারাজ  আমি যে  কাজে , আচরনে ভুল করছি, এবং আপনি ঝাড় দিচ্ছেন, এর ফলে খুব মন ভেঙে যায়। "আমি যে পারছি না" এতেও খুব খারাপ লাগছে।  জীবনে এত খারাপ অবস্থা কখনো হয়নি। কিন্তু এখন খুব down লাগছে। কেন এমনটা হচ্ছে বলুন তো!! 


ম:-  দেখো।আগেও বলেছি,জ্ঞানপীঠ প্রত্যক্ষ মুক্তি ক্ষেত্র।এখানে ধ্যান এবং মোক্ষেচ্ছার অভাব থাকলে যাবতীয় সমস্যা হবে।তোমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে । নিজের সাথে বেশী করে সময় কাটাও। 


আমি -  মহারাজ নিজের সাথে বসছি। কিন্তু  আমি উদ্ধার করতে পারছি না। বুঝতে পারছি কোথাও একটা mismatch হচ্ছে, কিন্তু কি mismatch হচ্ছে তা ধরতে পারছি না।


ম:- তোমার এই প্রশ্ন অহংকার থেকেই আসছে। তোমার একটাই কাজ, সবকিছু ছেড়ে, মোক্ষেচ্ছার দিকে ধ্যান দাও।আগে matching করার চেষ্টা ছেড়ে নিজের সাথে বসো।জিজ্ঞাসা করো,সত্যই কি আমার সরাসরি মুক্তি চাই?কেন এসেছি এখানে?এটাই তোমার মূখ্য কাজ।


সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।


আমি -  মোক্ষেচ্ছা, ধ্যান, এগুলি কি ব্যক্তি ইচ্ছা করে আনতে পারে? আপনিই তো বলেন- ধ্যান, মোক্ষেচ্ছা- এগুলো‌ করা যায় না, এগুলো ঘটে।


ম:-  না, তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে। মোক্ষেচ্ছা, ধ্যান এগুলোতে প্রথমে ব্যক্তির  তীব্র ইচ্ছা থাকতে হবে। ইচ্ছা না থাকলে তো কর্মই ঘটবে না। আজ পর্যন্ত মুক্তি না চেয়ে কেউ পায়নি।যখন চাইতে হবে,তখন কর্তা হতেই হবে। কর্তা হয়ে কর্ম করবে, কিন্তু ফলের আশা করলে চলবে না, ওখানে অকর্তা হয়ে যেতে হবে।যখন চাইছো,তখনও এই বুদ্ধি রাখো,তুমি প্রকৃতির একটা অংশ হিসাবেই চাইছো।প্রকৃতিই তোমার মাধ্যমে চাইছে।সব চেষ্টা তোমার দ্বারাই হবে।এটাই কর্ম ও ধ্যান একসাথে নিয়ে চলা।


সেজন্য শ্রীকৃষ্ণ গীতায় এই কথাই বলছেন - *"কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।" চাওয়া তোমার কাজ।পাওয়া তোমার হাতে নেই।



আমি -  কিন্তু কেউ যখন কর্তা হয়ে কর্ম করবে, তখন তো তার মধ্যে অহংকার চলে আসবে--ই!!


মঃ- এইজন্যই তো  স্বামিজী বলেছেন কর্ম ও ধ্যান একসাথে করতে হবে। স্বামিজীর লেখাকে কেউ বুঝতেই পারে না। ধ্যান ছাড়া কর্ম করলে *অহংকার* disaster ঘটাবে। আবার কেউ যদি নিজেকে *অকর্তা* বলে ঘোষণা করে কর্ম না করে বসে থাকে, তাহলে সে মিথ্যাচার করছে। তাই, ধ্যানপূর্ন হয়ে কর্ম করতে হবে। 


প্রথমে কর্তা  হয়ে নিজের ইচ্ছায় কর্ম করতে হবে।ইচ্ছা যদি জীবনের প্রগতি ও উন্নতির দিকে,ধ্যানের দিকে হয়,তবে কর্তা হাঁপাবে,ক্লান্ত হবে।

 কর্ম করতে করতে হাঁপিয়ে গেলে, তারপর অকর্তাভাব এমনি এমনিই ঘটবে। তার জন্য কোনো চেষ্টা করতে হবে না। (যেমন - কেউ সারাদিন এত কাজ করেছে যে, রাত্রিবেলায় ক্লান্তিতে তার এমনি এমনি ঘুম চলে আসবে, ঘুমের জন্য কোন চেষ্টা করতে হবে না।)


'কিন্তু কর্তা না হয়ে কেউ অকর্তা হতে পারবে না। যেমন- তুমি যদি কোন office পরিচালনা কর , এবং, সেখানে তুমি যদি বল, আমি অকর্তা, তাহলে তোমার  স্টাফেরা  কাজ করবে না,  আর  তুমি কিছু বলতেও পারবে না, কারন তুমি তো অকর্তা । তোমার office ২ দিনে লাটে উঠে যাবে।  ওখানে তোমাকে পূর্ণভাবে কর্তা হতে হবে। কিন্তু তারপর ফল কি হবে, সেটা তোমার হাতে নেই, ওখানে তুমি অকর্তা ।লোকে বিপরীত করে।যেখানে করা যায়,সেই বর্তমানে কর্ম করে না।আর ভবিষ্যতের ফল,যেখানে কিনা হাত নেই,তা নিয়ে বর্তমানে মাথা খাটায়।


সেই জন্যই কৃষ্ণ বলছেন—


ন কর্মনামনারম্ভান্নৈষ্কর্মং পুরুষোঽশ্নুতে ।


অর্থাৎ কর্মানুষ্ঠান না করিয়া কেহ নৈষ্কর্ম্য হতে পারে না।


তাই, নিজের মধ্যে প্রথমে তীব্রভাবে মোক্ষেচ্ছা, ধ্যান জাগাতে হবে। তারপর ফল কি হবে? তাতে তোমার অধিকার নেই, তা তোমার জানা নেই ।দরকারও নেই। 


আমি শুনে চুপ করে রইলাম। 


ম:- যাও  এক্ষুনি এটা নিয়ে একটা ব্লগ লিখে ফেলো দেখি।


আমি- মহারাজের ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে মনে মনে ভাবতে লাগলাম    "কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।"  এবং নিজের জায়গায় গিয়ে এটি লিখে ফেললাম।