অদ্বৈত জ্ঞানপীঠ আশ্রম, দিয়াড়া, ৮ই জানুয়ারী, ২০২২
ভক্ত সঙ্গে উপনিষদ অধ্যয়ন
শনিবার, ৮ই জানুয়ারী, ২০২২, আশ্রমের দোতলায় যেখানে মা, স্বামীজি এবং ঠাকুরের পট প্রতিষ্ঠিত, সেখানে চেয়ার পাতা হয়েছে, মহারাজের বসার জন্য। ভক্তদের জন্য সতরঞ্চি.. মহারাজ এসে বসেছেন, শান্তি মন্ত্র পাঠের পর ক্লাস শুরু হয়েছে উপনিষদের। মহারাজ ব্যাখ্যা করে চলেছেন একের পর এক শ্লোক। ইতিমধ্যে, সভার মধ্য থেকে জনৈক এক ভক্ত প্রশ্ন করলেন, ' মহারাজ, এতো যে আপনারা ধর্ম, ধর্ম করছেন, উপনিষদ বোঝাচ্ছেন, গীতা বোঝাচ্ছেন.. এর তাৎপর্য আমি বুঝি না! এর থেকে যারা মানুষের সেবা করছে, বন্যায় ত্রাণ দিয়ে মানুষকে রক্ষা করছে, করোনা, ওমিক্রণ এর মতো বিপর্যয়গুলোতে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তারাই তো যথার্থ মুক্ত। তারাই তো আসল মানুষ।
মহারাজ (একটু হেসে) বললেন, মানুষের সেবা ----- সে তো খুব ভালো কথা। স্বামীজীর একটা কথাকে আজকাল খুব কোট করা হয়, তাই না। কি যেন আছে.. হ্যাঁ... " বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর। জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।"
যথার্থ কথা.. কিন্তু এর যথার্থতা depend (নির্ভর) করছে কার ওপর? যে কাজ করছে অর্থাৎ যে কর্তা, তার মানসিক স্থিতির ওপর। কর্তার মানসিক স্থিতি থেকে কর্ম বেরোয়। এবার কর্তা যদি হয় অবিবেকী মানে বাংলা কথায়, ধরুন, এমন একজন ব্যক্তি যে নিজের ব্ল্যাক মানি হোয়াইট করবার জন্য দান করছে, প্রচুর টাকা ডোনেশন্ দিচ্ছে, নিজেই দশটা এন.জি.ও খুলে রেখেছে, সেবাকাজ(তথাকথিত) করছে বিভিন্ন জায়গায়। কি বলবেন তাকে? 'যথার্থ মানুষ'?
"উপনিষদ" স্পষ্ট বলে দিচ্ছে, কোন কর্মের দ্বারা জ্ঞান হবে না। কেন হবে না? কারণ আগেই বলেছি, কর্তার মানসিক স্থিতি থেকে কর্ম বেরোয়। এবার কর্তাই যদি corrupted (দুর্নীতিগ্রস্ত) হয়, কর্তাই যদি অবিবেকী হয়, তবে তার দ্বারা কাজ তো অনেক হবে.. কিন্তু তা তাকে এবং তার কাজের মাধ্যমে অন্যকে মুক্তি দেবে না। আর যা বন্ধন দেয়, তা কখনোই যথার্থ কর্ম হতে পারে না।
ধরুন একজন মাতালকে বলা হলো, একটা কাঁচের গ্লাসকে ঘরের একটা corner (কোণে) -এ রেখে দিতে। সে হয়তো ঠিক ঠিক কাজটা করলো। এবার তাকে কিছু কাঁচের প্লেট দিয়ে বলা হলো, টেবিলের উপর রেখে দিতে। এবার সে, কাজটা করতে গিয়ে প্লেট গুলো হাত থেকে ধড়াম্ করে ফেলে দিল। গোটা ঘর জুড়ে কাঁচে কাঁচ। কি বলবেন এই বিষয়টাকে? কর্তা যখন অবিবেকী হয়ে কাজ করে তখন সে এই মাতালটার মতোই আচরণ করে। হয়তো কখনো সে ঠিক কাজও করবে, আবার কখনও তার দ্বারা ভয়ঙ্কর blunder(ভুল) হয়ে যাবে।
এজন্যই "উপনিষদ" বলছে কোন কর্মের দ্বারাই জ্ঞান হয় না। আগে জ্ঞানের আলোয় নিজেকে দেখে নিতে হয়, যে আমি কি হয়ে আছি। নিজের স্থিতি দেখে অন্তরে তীব্র গ্লানি না উঠলে কর্তা কখনোই সঠিক কাজ করতে পারবে না। যে মনে করছে, আমি নিজেকে বদলাবো না, কিছু কিছু উপরে উপরে বদলে ফেলবো, তাতে সবকিছু change(পরিবর্তন) হয়ে যাবে! তার মতো stupid (বোকা) জগতে আর দুটি নেই।
তাই relief camp(ত্রাণ শিবির)-এ গিয়ে জীবের বস্তুগত চাহিদা মেটাতে তাকে সাহায্য করো কিংবা গীতা, উপনিষদে যা বলা হয়েছে তেমন জীবন নিজে বেঁচে, অন্যের চেতনার উন্নতি ঘটাতে তাকে সাহায্য করো। যাইই করো.. আগে বিবেকের ছাকনি আরোপ করে তারপর করো। তবে এটা মনে রেখো, মানুষ শুধু দেহ মাত্র নয়। চেতনাই মানুষকে অন্য জীবের থেকে আলাদা করে। এবার, যীশুর মত অন্যের জন্য নিজে ঝুলে পড়ো কিংবা কৃষ্ণের মতো অস্ত্র না ধরেও ধর্মযুদ্ধে সকলকে ধরাশায়ী করো.. Choice is yours.(পছন্দ তোমার)।
জ্ঞান ছাড়া যে কর্ম হয় তাতে মুক্তি কোথায়? এ জীবকে বদ্ধ থেকে বদ্ধতর করে।