April 13, 2022 - BY Admin

আদর্শের সামনে ' আমি ' খুব ছোট

সেবার বর্ধমানে মহারাজের সাথে আমরা সব্বাই মিলে গিয়েছি আমদের সকলের প্রিয় সন্দীপন দাদার বাড়িতে। দাদা তখনও আশ্রমবাসী হননি। এমনই চমৎকার জায়গাটি, যে দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। গাছপালা বন-বনানীতে ঘেরা বেশ গোছানো একটা গভর্মেন্ট কোয়াটার, চারিদিকে যেন ছড়িয়ে আছে এক চির অমলিন শান্ত ভাব.. প্রথম দেখাতেই জায়গাটা ভারী পছন্দ হলো আমার।


বাড়ি থেকে বেরোতেই মসৃণ পিচের রাস্তার দুপাশে কোয়াটারগুলোকে আগলে রেখেছে অসংখ্য চেনা-অচেনা সারি সারি গাছ। আমরা এই পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই গিয়েছিলাম কাছেই একটি সর্ষে ক্ষেত দেখতে। এমন সুন্দর জায়গা, তার সাথে  আজ আবার মহারাজ অতি প্রসন্ন মেজাজে! প্রশ্ন করার এমন সুবর্ণ সুযোগ ছাড়া যায় নাকি! সর্ষে ক্ষেতের মধ্যে বসেই শুরু হলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। কে যেন একটা বুদ্ধি করে, সবটা ভিডিও রেকর্ড করছিল! সেদিন রাতেই সেই ভিডিওটা আপলোড করা হল ইউটিউব চ্যানেল-এ। যতদূর মনে পড়ছে ভিডিওর টাইটেল টা ছিল..'ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করবে কিভাবে?'


যাইহোক..

ফেরবার পথে মহারাজের পাশে পাশেই হাঁটছিলাম। নানান বিষয়ে কথা হতে হতে হটাৎ কথা উঠলো (স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ)-র বর্তমান আশ্রম বাড়িটির ব্যাপারে। তখনও আশ্রম স্থানান্তরিত হয়নি। দিয়াড়ার যুগের মোড়ের বাড়িটিই ছিল স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ-র তখনকার ঠিকানা। বড়ই সুন্দর গাছ-গাছালিতে ঘেরা যেন একটি ছোট্ট বাগানবাড়ি বিশেষ, পেছন দিকটায় একটা ঘাট বাঁধানো পুকুর। নির্জন বাস, সাধন-ভজন-এর একেবারে আদর্শ স্থল।


 আমি বরাবরই সবুজে ঘেরা শান্ত পরিবেশ ভালোবাসি। শহরের ননস্টপ কিচির মিচির আমার কোনো কালেই একেবারেই পছন্দ নয়। প্রথম দেখাতেই তাই জায়গাটির প্রতি মন পড়ে গিয়েছিল। সেই বাড়িটি ছেড়ে তাই শেওড়াফুলির বর্তমান আশ্রমে উঠে আসতে মনের কোথাও যেন বেশ খারাপই লাগছিল। তবু মনকে মধ্যে মধ্যে বোঝাচ্ছিলাম...' দ্যাখ্ মন তোর পথ কিন্তু ত্যাগের, তোর কিছুতে মোহ করতে নেই।'

  কিন্তু কে শোনে কার কথা! বাড়িটার কথা মাথায় এলেই মন খারাপ প্রায়ই চাগাড় দিয়ে উঠছিল। তাই হয়তো তারই রেশ টেনে মহারাজকে বলেছিলাম, বাড়িটা কিন্তু সত্যিই বড়ো ভালো ছিল মহারাজ, পুকুর ধারটাও ভারী সুন্দর।


মনের কথা ধরতে পেরেই বোধহয় মহারাজ সেদিন বলেছিলেন,  আমারও গঙ্গার ধার, নির্জন বাস, গাছপালা --- এসব ভালো লাগে। কিন্তু কি জানো! যখন নসিবপুরের বাড়িটা ভাড়া নিয়েছিলাম, তখন তা নিয়েছিলাম যাতে দুটো লোক এসে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারে। 


ঈশ্বর যখন দায়িত্ব দিচ্ছেন, তখন নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা-গুলোকে আস্তে আস্তে সাইড করে দাও। পরের জন্য কিছু করতে হলে কি নিজের কথা ভাবা চলে?

এই আশ্রমটার জায়গা ভালো, একেবারে স্টেশনের সামনে, হাতের কাছেই সব! দুটো লোক ঝট করে এখানে চলে আসতে পারবে। কিন্তু ওখানে তো দেখছো, একটা Toto অবধি পাওয়া যায় না। মানুষ চাইলেও ওখানে যাওয়া মুস্কিল। এবার ভেবে দেখো, কি নিয়ে ভাববে.. নিজেকে নিয়ে না আদর্শ নিয়ে?


চুপ হয়ে গেছিলাম কিছুক্ষণ। সেদিন রাতে শোবার পরও কথাগুলো কানে খুব বাজছিল। 


অত্যন্ত স্বার্থপর আর ছোট লাগছিল নিজেকে। তাই সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, মনের ভালো লাগা মন্দ লাগা নয়, এবার থেকে যা সঠিক তার দিকেই পথ চলব।