মঙ্লবার বিকালে আমি ও আর একজন স্বেছাসেবী আশ্রমে এসেছি। আমাদের দুজনেরই উদ্দেশ্য হলো, আসন্ন দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দূর্গাপূজার প্রতিদিন কীভাবে পূজার যোগাড় করতে হবে। কখন কোন কাজটা কীভাবে করলে পূজার সময় পূজারীর আর পুরো ব্যবস্থার কোনোও অসুবিধা হবে না , সেই-বিষয়ে মহারাজের কাছ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝে নেওয়া, কারণ পূজার সময় এই দায়িত্বটি আমাদেরই সামলাতে হবে।
এই বিষয়ে যা যা জানার তা জানা হয়ে যাবার পর আমি মহারাজকে আমার একটি ব্যক্তিগত সমস্যার কথা জানালাম।
আমি: মহারাজ, আমার একটা সমস্যা হয়েছে।
মহারাজ: (হেসে বললেন) কন? কী আবার সমস্যা হলো আপনার?
আমি: মহারাজ আমার স্বামীর Pulmonary diseases -এর জন্য ডাক্তার ওনাকে দিনে ও রাতে ঘুমবার সময়' 'Bipap' machine নিতে Prescribed করেছেন। বলেছেন ওনার যা শারীরিক অবস্থা তাতে ওনাকে 'Bipap' অতি অবশ্যই নিতে হবে। তা না হলে যে কোন সময় ওনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে।
কিন্তু, মুশকিল হলো আমি কিছুতেই ওনাকে এটা বোঝাতে পরছি না। দিনে ও রাতে যখনই ঐ machine টির mask টি মুখে পরিয়ে -দিচ্ছি উনি সেটি খুলে- ফেলছেন। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি যে,এটাতে ওনার অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু, উনি সেটা বুঝতে চাইছেন না। কারোর কোন কথাই উনি শুনতে চাইছেন না। এমনকি ডাক্তারের কথাকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দিনের পর দিন Bipap ছাড়াই থাকছেন।
এই পরিস্থিতিতে আমার মানসিক অবস্থা খরাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি যতক্ষণ বাড়ীতে থাকছি,আমার কিছুই ভালো লাগছে না। এই পরিস্থিতিতে আমার কী করণীয় আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না, কীভাবে এই পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতে পারব তা যদি বলেন তো, খুব উপকৃত হবো।
মহারাজ: দেখুন, আমরা আমাদের পরিবারে যাদের নিয়ে থাকি, তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা mental Pattern আছে। অস্তিত্ব তাদের সেই ভাবেই নির্মাণ করেছে। আমরা যতই একসাথে,এক জায়গায় থাকি না কেন, আমাদের mental pattern অনুযায়ী কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ একা। সেখানে আমরা কারোর হস্তক্ষেপ চাই না।অন্যকে সহায়তা করতেও পারি না।
তো, এক্ষেত্রে দেখতে হবে যে, আপনি আপনার স্বামীকে সুস্থ করার জন্য চেষ্টা করছেন।কিন্তু উনি তাতে সহযোগিতা করছেন না বা কোন কারণে ওনার কোন অসুবিধা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনি ওনাকে জোর করবেন না। দেখুন,উনি কী করেন। উনি যখন কোন ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাইবেন ওনাকে সাহায্য করুন। কোন জেদাজেদি করবেন না। তাতে আপনার মধ্যে শান্ততা থাকবে না। আর যখনই আপনি অশান্ত হয়ে উঠবেন আপনিও ঠিকমতো ওনার সেবা- শুশ্রূষা, যেটা করতে পারছিলেন সেটাও করতে পারবেন না।
বরং আপনি ওনার সাথে এমন আচরণ করুন যেন উনি বুঝতে পারেন আপনি আর ওনার ব্যাপারে কোন মাথা ঘামাচ্ছেন না। ওনাকেই ওনার ভালোমন্দ ঠিক করতে হবে। আপনি ওনার ব্যপারে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিয়ে বরং নিজেকে অন্য কোন কাজে ব্যস্ত রাখুন, যাতে আপনি ভালো থাকেন।আর সত্যি বলতে,আমরা বুঝি বা না বুঝি আমরা নিজের উপরই মাত্র কাজ করতে পারি।অন্যকেও সহায়তা ততটা করা সম্ভব,যতটা আমরা নিজে তৈরী ও সামনের ব্যক্তি গ্রহণশীল।এ দুটোর একটাও যদি কম পড়ে,সাহায্য ঘটবে না।অন্যের উপর কাজ করা আমাদের হাতে নেই।তাই,নিজের থেকেই শুরু করুন।
আপনার সময়টা আপনি কোন ভালো বই পড়ে, গান শুনে বা কখনও কোন কিছু লিখে কাটান। দেখবেন এরকম ভাবে নিজেকে নিজের প্রেমের কাজে নিযুক্ত রাখলে আপনার মনের অশান্তি কেটে যাবে। আর আপনার মন অনেক হালকা হয়ে যাবে। এভাবেই নিজেকে শান্ত রাখুন।আর জানুন,চাঁদ মামা যেমন সবার মামা।তেমনি এই পরম ব্যবস্থার সাথে সকলের One to One relation.ওখানে আমরা চির যোগস্থ।যার যার প্রকৃতি হিসাবে প্রত্যেককে জগদম্বাই সামলাচ্ছেন।যদি জীবনের alignment আমাদের নির্ধারণ করে,তবেই মাত্র আমরা একে অপরের সহায়ক হতে পারি।