মহারাজ তাঁহার কক্ষে বসিয়া চবনপ্রাস খাইতেছিলেন, শ্রীশ্রী চণ্ডী বিজ্ঞাপন রচনার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় অধ্যায়ের অন্তর্গত একখানি মন্ত্র বাছাই করিয়া তাঁহার সম্মুখে গিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম -
"কোটিকোটিসহস্রৈস্ত্ত রথানাং দন্তিনাং তথা। হয়ানাঞ্চ বৃতো যুদ্ধে তত্রাভূন্মহিষাসুরঃ।।"
(অর্থাৎ, মহিষাসুর সেই যুদ্ধে কোটি কোটি সহস্র রথ, হস্তী ও অশ্বে পরিবেষ্টিত হইয়াছিল।)
ইহার অর্থ আপনি বলিয়াছিলেন, দেবী অর্থাৎ জ্ঞান এবং মহিষাসুর এর প্রকৃত অর্থ আমাদিগের মূলভূত অহং ও আমাদিগের অহং কোটি কোটি ইন্দ্রিয় দ্বারা পরিবেষ্টিত। কিন্তু, আমাদের ইন্দ্রিয় বলিতে আমরা জানি -চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক এবং মন। তাহা হইলে কোটি কোটি ইন্দ্রিয় বলিতে কি বুঝাইতে চাওয়া হইয়াছে। বুঝিতে পারিতেছি না।
মহারাজ আমার প্রশ্ন অতি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করিয়া কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন, অনন্তর তিনি ঈষৎ হাসিয়া, আমার দিকে চাহিয়া, নিজ সম্মুখস্থ কাষ্ঠ টেবিলে মৃদু হস্তাঘাত করিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "এই হস্তাঘাতজনিত শব্দ তুমি শুনিলে, এই শব্দ তোমার কর্ণ দ্বারা শ্রবিত হইল। যদি শব্দ না থাকে তাহা হইলে তোমার শ্রবণ-ইন্দ্রিয় অর্থাৎ কর্ণের অস্তিত্বই বা কোথায় রহিল?
আমি কিছুক্ষণ নীরব রহিয়া বিষয়টি ভাবিয়া দেখিতে লাগিলাম, মুহূর্তের মধ্যে এক তীব্র মুগ্ধতার মধ্যে গিয়া মহারাজকে মনে মনে প্রণাম না করিয়া থাকিতে পারিলাম না। এই সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ কি সহজেই না বলিয়া দিতে পারিলেন।