আসলে কেমন তিনি?
আমি যখনই ব্লগের জন্য কিছু লিখতে বসি, মাথায় মহারাজের সাথে ঘটা নানান ঘটনা, যার সাক্ষী হবার সুযোগ এই অধমের হয়েছে ----- তা সবই কিলবিলিয়ে ভেসে ভেসে উঠতে থাকে, ভেবে পাই না, কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখি। এ বলে আমারটা লেখ তো ও বলে আমি কম নাকি! এই বিরুদ্ধ শক্তিগুলির সাথে লড়তে লড়তেই আমার অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়, শেষে এমনও হয় যে, 'ধুত্তেরি!'- বলে খাতা কলম ফেলে উঠে যাই, লেখা তখন একেবারে মাথায় ওঠে!
আজ তাই ঠিক করেছি অত শত ঝামেলায় আমি আর যাবই না! মহারাজকে এদ্দিন যা দেখলাম তারই বরং একটা আউটলুক তৈরি করতে চেষ্টা করি, যারা শুধু ভিডিওতেই দেখেছেন মহারাজকে তারা কিছুমাত্র ধারণা নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন।
ভিডিওতে যখন দেখেছিলাম তখন মনে হয়েছিল সামনে গেলে চড় থাপ্পড় না হোক নিমপাতার রস যে পেতেই হবে, তা নিশ্চিত।
তা, মনে সাহস জুগিয়ে যেদিন উপনিষদের ক্লাসে প্রথম এলাম, রাগ-দ্বেষ-শোক.. বিশেষ কিছুই তেমন ঠাহর হলো না। বরং একটু বেশীই জেন্টল বলে মনে হয়েছিল প্রথম স্বাক্ষাতে।
মন স্বাভাবিক ভাবেই খচ্ খচ্ করতে লাগলো! উপায় বার করলাম, আলাদা করে কথা বলার!
ইচ্ছে করেই কড়া ভাবে বলেছিলাম, আপনার পুনর্জন্মের থিওরির সাথে আমি কিন্তু একেবারে একমত নই! ভেবেছিলাম আমার মুখে এমন কথা শুনে, সেই প্রচলিত গম্ভীর চিত্তে হয়তো এমন কিছু বলবেন যে আমি একেবারে চুপ হয়ে যাব অথবা রেগে মেগে আমার নির্বুদ্ধিতার জবাব দেবেন। কিন্তু ঘটনা ঘটলো একেবারে উল্টো! খুব ধীরভাবে শান্ত মেজাজে উত্তর করলেন।
আশা পুনরায় ভঙ্গ হল! সেদিন মহারাজের সাথে প্রায় ঘন্টা দু'য়েক কথা বলবার সুযোগ হয়েছিল। অনেক বিষয়ে কথা হবার পর জেনেছিলাম যে, ঝুট্ ঝামেলার থেকে শান্তিতে মুড়ি চিবিয়ে গীতা পড়ায় উনি বেশি আনন্দ অনুভব করেন।
এমন শান্ততা দেখবো বলে মোটেও আসিনি আমি, আমার তো চিরকালই বিদ্রোহ ভালো লাগে।
ভগবান আমার সেই ইচ্ছাও তাই আর অপূর্ণ রাখেননি। বিদ্রোহের এমন আগুনে প্রতিদিন জ্বলতে পুড়তে হয় এখন, যে আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!
দুঃখের হলেও এ কথা ধ্রুব সত্যি যে ব্রহ্মচর্যের শুরু থেকেই মাতাজী বকা খাওয়ার হিট্ লিস্টে সর্বপ্রথমে নাম লিখিয়েছেন! এতো মূর্খামি যে ভেতরের কোন্ গহন আঁধারে লুকিয়ে ছিল তা গুরুগৃহে এসে পৌঁছানো অবধি জানা পর্যন্ত ছিল না!
একদিন অহেতুক বেশী বকার জন্য বললেন (হাতের পাঞ্জা দেখিয়ে) - কত বড়ো দেখেছো তো, চুপ করে গান কর।
আবার কোন একদিন ফুচকা খাচ্ছিলাম, হটাৎ করে কোত্থেকে এসে বললেন, এই পেটরোগাটাকে এতোগুলো কে দিয়েছে! এরপর তো হেগে ছড়াবে!
মাতাজির সম্মান সব ধূলায় পড়িয়া গড়াগড়ি খায় এই তথাকথিত শান্ত ব্যক্তির সামনে!
মাঝে মাঝে এত রাগ হয়! আবার...
যাঁকে একদিন অতি শান্ত ভাবার ভ্রম হয়েছিল, আজ যখন তাঁকেই দেখি বারবার একই ভুল করার জন্য কোনো ব্রহ্মচারীকে জুতো তুলে ঘা কতক কষাতে ছুটছেন, আবার ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না শুরু করলে তাকে নিজের হাতে ভাত মাখিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে খাওয়াচ্ছেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন তখন মা না গুরু! ঠিক বুঝে উঠতে পারি না..
মহারাজকে আপনারা যেমন ভিডিওতে/ ক্লাসে দেখেন, আদৌ উনি তেমন গম্ভীর নন। মাতাজির মিমিক্রি হোক/ রুদ্র মহারাজের পেছনে আদা জল খেয়ে পড়ে থাকা হোক, খেতে বসে হো হো করতে গিয়ে গলায় ভাত আটকে মরবার জোগাড় করা হোক, সবেতেই তিনি যাকে বলে এক্সপার্ট মাইন্ড! একবার আমায় এক ব্রহ্মচারী বলেছিলেন বটে যে মহারাজ আসলে তাদের লিডার। তখন না বুঝলেও আজ আমি মর্মে মর্মে বুঝি এর যৌক্তিকতা!
দিন রাত আমাদের নিয়ে মজা করেই চলেছেন, যা নয় তাই বলছেন, হে হে করে হাসছেন, সিংহের গর্জনের মত নাক ডাকিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন, আবার হাতে উপনিষদ ধরলেই যেন অন্য এক মানুষ হয়ে যাচ্ছেন। যাকে অনেক দূরের জগতের বলে মনে হয়, যাকে দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা আপনা হতেই ঝুঁকে যায়...
তবে, আর যাই হোক! এমন মহান ব্যক্তিত্বকে সম্যক বোঝা আমার মত সাধারণ মাথার কম্ম নয়। আপনাদের মধ্যে থেকেই কোন এক অসাধারণতা বেরিয়ে এসে কোন একদিন তাঁর চরিত্রের যথার্থ বিশ্লেষণ করুন, এই শুভকামনা রেখে আজকের মত আমি বিদায় নিলাম।