May 26, 2022 - BY Admin

কামড়ানোই যদি নিয়তি, তবে গুরু নয়, গুরুতাকে কামড়াও!


আমরা সেদিন পাইকপাড়ায় এক ভক্তের বাড়িতে। রাত তখন প্রায় ১০:০০ টা.. ভক্তসহ আমরা জনাকয়েক ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে, মহারাজ একটা চেয়ারে বসে কথা বলছেন। নানান বিষয়ে কথা হচ্ছে, হাসি মজা হালকা ভারী, মধ্যে মধ্যে তত্ত্ব কথা---চলছে এসব।


আমি মহারাজের ইনস্টাগ্রামের প্রোফাইল থেকে একটা একটা করে ফটো ডিলিট করছি। এটাকে এবার থেকে ট্রুথ আনফোল্ডের কাজেই ব্যবহার করা হবে।


ফটো গুলো দেখছি, আর এক একটা মন্তব্য করছি। কখনো মহারাজের আগের কোন ফটো দেখে, তাঁর এখনকার চেহারার প্রশংসা করছি, কখনো বা তাঁর হাতে গড়া মূর্তির ছবি দেখে, এতো সুন্দর মূর্তি বানানো কোথায় শিখলেন!---অবাক হয়ে  প্রশ্নই করছি।  মধ্যে মধ্যে মহারাজ উত্তর করছেন বটে, তবে তাঁর উত্তর শুনে মনে হয় যেন খানিক বিব্রত তিনি!

তবুও আমি পুনোরুদ্যমে সেই একই  কথার রেশ টেনে নানান মজার মন্তব্য করেই যাচ্ছি।


এমন সময় কথা প্রসঙ্গে হটাৎ ভক্ত এক বিশেষ সম্প্রদায়ের কথা শুরু করলেন মহারাজের সাথে। মহারাজও সম্প্রদায় সৃষ্টির গুণের তুলনায় তার নানান অপগুণের ব্যাখ্যা করতে থাকলেন।


 মহারাজ বলে চললেন, ট্রেনিং সেন্টারের প্রয়োজন ততক্ষণ, যতক্ষণ শিশুর ভেতরে জ্ঞান প্রবেশ করেনি।  নিয়ম কানুন সব ততক্ষণ। একবার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে গেলে, পাখি তখন এই গাছের ডালেই বাসা বেঁধে থেকে যাবে, নাকি অন্য কোথাও উড়ে চলে যাবে, তাতে আর বিশেষ কিছু যায় আসে না। 


তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে, সম্প্রদায়ের ওই rigidness-এই যত আপত্তি।

 একজনকে ভগবান বানিয়ে দিনের পর দিন তাঁর নামেই যত অনাচার! কিছু মান্যতা, প্রথা পরম্পরা কামড়ে বাঁচা- এ, সব সম্প্রদায়েরই নিয়তি।


 স্বামীজি কি জানতেন না, কালে তাঁর সম্প্রদায়ের কি সুফল আর কি কুফল হবে! তিনি সবই জানতেন। তবুও তাঁকে সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সব জেনেও সম্প্রদায় নির্মাণ করতে হয়েছিল।


আমি এই কারণেই এদের বলি(আমাদেরকে দেখিয়ে), আমি বেঁচে থাকতে থাকতে তো কোন সম্প্রদায় ফর্ম করতে দেবই না। আমার মৃত্যুর পরও যেন কোন সম্প্রদায় না হয়।


আমার এই ভগবান বানানোর tendency দেখলেই গা জ্বালা করে। এই তখন থেকে এরা যেসব বলে চলছে, দেখছেন না আমি চুপ করে যাচ্ছি। আমার ভালো লাগে না! কি হবে বিশেষ বানিয়ে? কেউ ভালো মূর্তি বানায়, রান্না করে, গান করে ইত্যাদি.. এর সাথে চেতনার কি সম্পর্ক? এগুলি তো প্রকৃতির বিচিত্রতা মাত্র। চেতনার উন্নতিতে সহায়ক না হলে এগুলোর কোন দাম নেই, আমার কাছে!


স্বামীজির extraordinary talent এর চেয়েও তার ত্যাগের দাম অনেক বেশি।  যে জীবনটা তিনি বেঁচেছেন প্রতি মুর্হুতে, তার দাম অনেক বেশি। তাঁর talent এর জন্য তাঁকে বিশেষ বানিয়ে পুজো করবার মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক rigidness এর গন্ধ আছে, তা আমার ভালো লাগে না কোন কালেই। স্বামীজির গুণবত্ত্বা তাঁর চেতনার উচ্চতাতেই সব চেয়ে বেশি ম্যানিফেস্ট করেছে। এই জন্য তিনি এতো মহৎ।


এই কারণে আমার চেহারা, আমার কোন ভৌতিক গুণের প্রশংসায় আমার অস্বস্তি হয়! এই অর্থে বিশেষ বানিয়ে লাভ নেই কিস্যু। বরং আসক্তি বাড়ে! কামড়ানো, খিমচানো! যা অহংকারের স্বভাব আর কি! কালে এর থেকেই সম্প্রদায় তৈরি হয়ে যত ঝামেলার সৃষ্টি!


আমি এতক্ষণ মাথা নিচু করে হাঁ হয়ে সব গিলছিলাম আর নিজের অপগণ্ডতার জন্য নিজেকে বারবার দুসছিলাম! মনে মনে ভাবছিলাম, মহারাজ এতো শ্রদ্ধার ঠিক এই কারণেই। উনি বড্ড সোজা সাপটা আর ক্লিয়ার!


মহারাজের কথা শেষ হতে না হতেই চোখ তুলে বললাম, আর এমন ভুল কক্ষণো হবে না মহারাজ। আজকের পর থেকে এসব নিয়ে আমি আর কোন দিন কিছু বলবো না। 


মনে মনে বললাম, এমন আদর্শ, সম্প্রদায়ের কামড়া কামড়িতে পরে মিথ্যা হয়ে যায়...--- এ দেখার আগে আমার মৃত্যু হওয়াও ঢের ভালো।