মহারাজ আজকাল ক্রমাগত বেদান্তের প্রচার কাজে যেন দিন-রাত লেগে আছেন। না শরীরের খেয়াল, না রোগের পরোয়া, না জাগার সীমা, না ওঠার অপেক্ষা। বাইরে বেরোনোর সময় নেই। কলকাতা বা কোথাও কোনো কাজে নিয়ে যেতে হলে খুব সমস্যা। উনি বলবেন ," এই সময়ে অনেক কাজ হতো, আমার গেলে চলবে না"। আর তার ফলাফলে double চাপ। এমনও চলে ১ দিনে সব কাজ মিটিয়ে ৪ বার কথা বলতে ও রেকর্ডিংয়ে বসেছেন। ব্যক্তিগত জীবন, ফোন নম্বর, কথাবার্তা, বিশ্রাম, পছন্দ, খাওয়া, পোশাক কিছুই যেনো নেই।
বললে বলেন," এটাই তো মুক্তি রে। তুই যেসব ভাবতে বলছিস, ওগুলোই তো সবার ভাবনার বিষয়, বন্ধনের বিষয়। এগুলো নেই মানেই তো হয়ে গেলো। যদি জীবনে এসব ভুলে থাকার মত কিছু পায়, তবে এমন কর্মকে আত্মা জানবি।"
এবার অনেক কষ্টে আশ্রমে একটা গাড়ি কিনবে ঠিক করেছে। একজন ভক্ত কিছু সহায়তা করবেন। কলকাতায় যাবেন মহারাজ। একজন তার গাড়ি নিয়ে এসেছে। বললেন ," তবে ছেড়ে দিই আপনাকে"। মহারাজ ভেবে বললেন," অত গুরুত্বপূর্ন নয় আজকের যাওয়া, যে তেলের এতটা টাকা খরচা করতে হবে। তাই ট্রেনেই চললেন। গন্তব্যে নেমে দেখছি, মহারাজ প্ল্যাটফর্মের over bridge এর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ট্রেনের থেকে ওঠানামা করছে যে ভিড় -তা দেখছেন। যেনো কি ভাবছেন !
বললাম ," কি ভাবছেন "?
মহারাজ: "দেখ, এই পুরো ভিড়ের প্রত্যেকটা মানুষের ইচ্ছা, তার একটা গাড়ি হোক। যেনো এই লম্বা সময় না লাগে বা এত ভিড় ঠেলতে না হয়।
আর আমরাও তেমনি ভেবে গাড়ী কিনছি!"
আমি : হ্যাঁ!তো কি?
মহারাজ: তবে এদের আর আমাদের পার্থক্য কি?
আমি: মানে, ব্যাপারটা তো একই ...।
মহারাজ:- পার্থক্য একটাই আমাদের কাছে সুন্দর, সার্থক, মহৎ এক উদ্দেশ্য, এক কর্ম আছে, যা ওদের নেই। এটা তাঁর করুণা, যে এমন সার্থক জীবন বাঁচার সুযোগ দিয়েছে। দেখ্, গাড়ী-বাড়ী না থাকা অভিশাপ নয়, আর থাকাও আশীর্বাদ নয়। এমন সার্থক, মহত্তম কোনো কর্ম জীবনে না থাকা অভিশাপ এবং থাকা ঠিকঠাক আশীর্বাদ। দেহ হিসাবে নিজেকে দেখিস্ না। তবে এসব প্রশ্ন আসবে," সাধুরাও গাড়ি, A.C ব্যাবহার করে"। আর যুক্তি হিসাবেও তা ঠিক। কিন্তু আমরা এই মূল বিষয়টা ignore করে দিই। আত্মাকে উপেক্ষা করে দিই। -এই দৃষ্টি রাখ্- আসলকে চেনার! কিছু বুঝলি ?
আমি: হুম।