February 16, 2024 - BY Admin

গুরু যাচাই

একদিন সকালে একান্ত আলাপচারিতায় মহারাজকে জিজ্ঞেস করলাম -- আগেকার সময় গুরু শিষ্যর সম্পর্ক অনেকটা আলাদা ছিল। যেমন- উদ্দালক- উপমন্যুকে গুরু যা বলতেন,তাই পালন করতো।কিন্তু, স্বামী বিবেকানন্দের সময় থেকে ব্যাপারটা পরিবর্তন হতে শুরু করে - গুরুকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সেটা স্বামীজীর মত কেউ কেউ হয়তো পারে। সবাই এটা দেখে এখনকার সময়েও তাই করতে চাইছে। এতে কি গুরু- শিষ্য সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে না?


মহারাজ :- পরীক্ষা তো অবশ্যই করা উচিত।আসল কথা হলো, কেউ যখন পরীক্ষা করতে করতে বোঝে যে,গুরু কি বলতে চাইছেন , তখন সে গুরুর প্রতি পূর্ণ সমর্পিত হতে পারে।আগে একজন খোঁজী বা জিজ্ঞাসু হয়।ঐ খিদে না মিটলে,উত্তর না পেলে কেউ নিজেকে দিয়ে দিতে পারে না।যখন কেউ পথের বিষয়ে স্পষ্টতা পায়,তারপরই মাত্র অন্য পথ ছেড়ে হাঁটার দৃঢ় সংকল্প করতে পারে আর তখনই একমাত্র প্রকৃত শিষ্যত্ব ঘটে।


আমি:- তারমানে আপনি বলতে চাইছেন , ঠাকুর মারা যাবার কিছুদিন আগে পর্যন্ত স্বামীজী প্রকৃত শিষ্য হতে পারেননি ।কারণ তখনও স্বামীজী ঠাকুরকে পরীক্ষা করছিলেন !


মহারাজ :- না, তা নয়।নরেন থেকে বিবেকানন্দ একটা ক্রমাগত পদ্ধতি। ঠাকুরের গলায় ক্যান্সার হয়েছিল। স্বামীজী দেখতে চেয়েছিলেন এত কষ্টের মধ্যেও ঠাকুর মনটাকে তুলে রাখতে পারেন কিনা!ওসব "অবতার" তত্ত্ব ধারে রাখো। নরেন বুঝলো,দেহের থেকেও আগের কিছু আছে, প্রচলিতের উপরেও চলন হয়।


আমি:- তাহলে একটা বিন্দুর পর শিষ্যত্ব অর্জিত হয়ে যায় ?


মহারাজ :- না। এটা ক্রমাগত চলতে থাকে। বোঝার সাথে সাথে শিষ্যত্বও অর্জিত হতে থাকে।একটা সময় গিয়ে পুরো সমর্পণ ঘটে।তার আগে math exam-এর stepmarks এর মতো ব্যক্তি এগোতে থাকে। সন্তান ৯ মাস ধরেই গর্ভে রয়েছে।প্রকাশ হয় ৯ মাস পরে। গর্ভধারিনী প্রথম থেকেই মা।


 অন্ততঃ আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।একটা জায়গায় গিয়ে বুঝেছি তাঁর উপর নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায়। এখন পৃথিবী এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও, কেউ আমার সাথে না থাকলেও, এই আশ্রম না থাকলেও আমার কিছু এসে যায় না।যতক্ষণ আছে,পূর্ণ সম্মানও রয়েছে।


 সেরকম যখন কেউ গুরুর উপর এতটা সমর্পিত হয়,যখন গুরু বাক্যই শেষ কথা,আস্থা এত দৃঢ়,দুজনের মন একই সুরে কথা বলছে,তখন সে প্রকৃত শিষ্য হয়ে ওঠে।তখনই কোন একজন প্রজ্ঞাবানও গুরু হন।এ দু তরফা অভিব্যক্তির সম্পর্ক।তাই,বলি Divine Marriage. 


তাই,নিজেকে ও গুরুকে যাচাই করা জিজ্ঞাসু থেকে শিষ্যত্বের যাত্রা।