November 24, 2022 - BY Admin

ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি

কৃষ্ণনগরে সম্মেলন শেষ করে ফেরার দিন অর্থাৎ ১৩ই নভেম্বর সন্ধ্যাবেলা পূজনীয় মহারাজ তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক কাজ শেষ করে আশ্রমিক ও ব্রহ্মচারীদের সাথে হঠাৎ-ই বসে পড়েছেন। এক আশ্রমিককে প্রশ্ন করছেন, "কিরে গীতা chanting কতদূর?


১ম আশ্রমিক : মহারাজ করছি! কিন্তু আপনি যে কাল থেকে গীতা পাঠ করতে বলেছিলেন তা আমার ঠিক করতে ভালো লাগছে না।


 ( আশ্রমে রোজ সকাল ৬ টায় গীতা পাঠ হয়)


মহারাজঃ এটাই তো প্রকৃতির সাথে ভেসে যাওয়া। তোর মন বললো "ভালো লাগছে না" আর তুই তার দলে নাম লেখালি?? ফলে কপালে জুটবে প্রকৃতির মার। তুই তো এখানে প্রকৃতির উপরে উঠতে এসেছিস। তাহলে বিরোধের ভাষা কোথায় তোর মুখে? গীতাপাঠ বড়ো কিছু ব্যাপার নয়।কিন্তু গীতার বোধ কোথায় গেল?তুই প্রকৃতির সাথে বিরোধ করে নিজেকে 'পুরুষ' হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিনিয়ত সক্ষম কিনা, তাই-ই ব্যাপার? 'ভালো লাগা,মন্দ লাগা' প্রকৃতির ভাষা।


১ম আশ্রমিক : ( 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি'-র মত অবস্থা এবং খানিকটা আক্ষেপের সুরে )  হ্যাঁ মহারাজ ঠিকই বলেছেন। কাল থেকে অভ্যাস শুরু করবো।


২য় আশ্রমিকঃ আচ্ছা মহারাজ আমার কোন একটি বিশেষ খাবার খেতে খুব ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে আমি জানি খাবারটা খাওয়া খারাপ শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই, কিন্তু আমার খুব পছন্দের খাবার। তো আমি কিভাবে এটা ত্যাগ করবো?


মহারাজ:  তুমি বাবা, ওখান থেকে Passively মজা নিয়ে ভালোই আছো,আর মুখে ত্যাগ বলে কি হবে ? 


২য় আশ্রমিকঃ না মহারাজ!!আমি তো নিরপেক্ষ ভাবে decision নিয়েছি এটাকে ত্যাগ করব বলে।


মহারাজঃ নিরপেক্ষভাবে যদি হয়,তবে তুমি  ঠিক এবং বেঠিকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছো। তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো যে তুমি যা করছো তা ভুল, সেইজন্যই ত্যাগের কথা বলছো। কিছু তা বাস্তবে করতে পারছো না কারণ তুমি নিরপেক্ষই নও, উল্টে ভেবে রেখে দিয়েছো 'আমি নিরপেক্ষ'। - এটাই অহংকার বা মায়ার Entry in your life. একটা সহজ কথা ভেবে দেখো - তোমার হাত কেটেছে আর তুমি লোককে জিজ্ঞাসা করছো, কি করবো?-এটা কোনোওদিন হয় ?  তুমি তো সরাসরি ডাক্তারের কাছে যাবে! আসলে তুমি খুঁজছো শান্তি আর তার জন্য যা কিছু করছো তার ফলস্বরুপ  পাচ্ছ সুখ বা দুঃখ। আর সুখকেই শান্তির নাম দিয়ে ফেলেছো। এখানেই হচ্ছে গোলমাল। কোনপক্ষে দাঁড়িয়ে আছো সেটা দেখো।সেটাই সব decide করে দেবে। তোমার ঠিক - ভুল সবকিছু থাকতে পারে। যখন কিছুকে ঠিক বা ভুল বলছো, দেখে নাও তুমি চেতনায় already তারই পক্ষ নিয়ে রাখোনি তো ? তবে বিচার করা অর্থহীন হয়ে যায়।নিরপেক্ষতা বড় innocent হয়।তুমি কি ততটাই সরল?



যেমন- নিজেই খাবারকে সুস্বাদু বলছো, নিজেই " ছাড়তে পারছি না " বলছো। তোমার সবকিছু তুমিই judgement দিয়ে দিলে। খাবার সুস্বাদু- এটা কে বলল?


২য় আশ্রমিক - আমি।


মহারাজ- 'ছাড়তে পারছি না' কে বলল?



২য় আশ্রমিক- আমি।



মহারাজ - তবে তুমি নিরপেক্ষ কিভাবে?দুটোই তো একদিকে!!পাল্লা ভারী তো!!তাতে আবার গো- বেচারা সাজছো।বৃত্তি, বিচার থেকে অনেক শক্তিশালী।লোভ হলো বৃত্তি।



২য় আশ্রমিক - তবে উপায়?


মহারাজ- দেখো,অর্জুনের কত দুর্বলতা ছিল কিন্তু কৃষ্ণের সঙ্গ ছাড়েনি। রথ ছেড়ে পালায়নি।তারই ফল গীতা ও ধর্মযুদ্ধে বিজয়। তোমরা তো পালাবে। এটাই পক্ষ নেওয়া। বলো যা হয় হোক, সত্যের সঙ্গ ছাড়বো না। তারপর দেখো,কি হয়!একটা নির্বাচন তুমি করো,সত্যকে ছাড়বো না।বাকি কাজ সত্যই করে দেবে।



২য় আশ্রমিকঃ বুঝলাম মহারাজ। সবই তার মানে মায়ার খেলা- কোথা দিয়ে যে মায়াদেবী খেলে চলে যাবেন, তা সচেতন না থাকলে বোঝা বড় মুস্কিল। এবার থেকে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে- আপনার শিক্ষা  প্রয়োগ করার চেষ্টা করবো।


মহারাজঃ (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) চল  সবাই। টিফিনের সময় হয়ে গিয়েছে, আজ তো আবার চপ-মুড়ি, 

বেশি করে মুড়ি মাখাতে হবে, নাকি বলিস!যা হলো!!খিদে বাড়তেই পারে।


মহারাজ সহ সকলে হো হো করে হেসে উঠল।