মহারাজকে জিজ্ঞাসা করলাম যে জপে বসলে অনেকের ঘুম পায় বলে। এটা বেশিরভাগ মানুষেরই একটা সমস্যা। জপে বা ধ্যানে বসলেই কেন এমন হয়? আমারও প্রথম প্রথম ঘুম পেত কিন্তু এখন আর পায় না। এর পিছনে রহস্যটা ঠিক কি?
মহারাজ বলেলেন - বাহ! এতো খুব ভালো ব্যাপার। আসলে কি জানিস তো আমাদের মনে তিন রকমের স্তর হয় - স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ। যখন স্থূলের প্রাধান্য হয় তখন আমরা সাধুসঙ্গে বসবই না, বরং 'ফালতু' বলে দাবি করে সব উড়িয়ে দিই। এমন ক্ষেত্রে সে আশ্রম,সন্ন্যাসী,ধর্ম,ধ্যান এসব বিষয় থেকে স্থূলভাবে দূরত্ব রাখবে।কারণ,এসবের স্থূললাভ চট্ করে ও সহজে বোঝা যায় না। আর মন স্থূলস্তরে চটপট ফলদায়ী বিষয়ই চায়।যেমন এখনকার সময়ে চলছে।এরা ধ্যানে বসবেই না।
2) সূক্ষ্ম স্তরে মন শরীরকে জয় করে নেয়।ফলে এরা আসবে,বসবে শুনবে কিন্তু,এদের resistence ভিতরে।বাইরে বিরোধ নেই।কিন্তু,ভিতরে মনের সহজ স্বীকার নেই। সবকিছু শোনে এবং বোঝার একটা প্রয়াস তার মধ্যে থাকে। সে physically এবং mentally সবভাবেই সৎসঙ্গে উপস্থিত কিন্তু যখন এই বোধ নিজের দিকে ঘোরে,জীবনের রূপান্তর চায়,তখন সে আর ধ্যানের সাথে থাকে না। এমন ক্ষেত্রে নানারকম চিন্তা,বিষয়,সমস্যা,স্মৃতি মনকে বিক্ষিপ্ত করে। ফলে ব্যক্তি physically সাধুসঙ্গে থাকলেও তার মন কিন্তু অন্য কোথাও।
ব্যক্তি বসে আছে কিন্তু,ধ্যানে নেই।
3) "আত্মিক" বা "কারণ" স্তরে অর্থাৎ ব্যক্তির কেন্দ্রে। Physically ও mentally বোঝার পরে implementation এর সময় অর্থাৎ যখন নিজেকে ভিতর থেকে পরিবর্তনের ডাক পরিষ্কার,তখন শেষ চেষ্টা মন করে। একে 'লয়' বলে। এটা শারীরিক ঘুম নয়। মন ঘুমিয়ে পড়ে।শারীরিক ক্লান্তি থাকলে আলাদা ব্যাপার। মন বিরাটে মজতে অস্বীকার করে। কোনও উপায় না দেখে,সে নিজের থাকাকেই বন্ধ করে দেয়।
এ অবস্থায় এক intense বিরোধের বীজ যেন লুকিয়ে থাকে, আর ধ্যান আমাদের সাহায্য করে ঐ বীজকে নাশ করতে। Problem কে একদম গোড়া থেকে উৎখাত করে।
ধ্যানে আমরা নিজেদের সাথে থাকি তো সেজন্য ওখানেই একমাত্র বোঝা যায় তোর ভেতরে কোন বিরোধ আছে কি না? নিজের সাথে প্রেমে আছিস কি না? বর্তমানের প্রতি স্বীকারের ভঙ্গিতে বাঁচছিস কি না?অতএব প্রথমে শারীরিক বিরোধ, তারপর মানসিক,তারপর আত্মিক।এরপরে ধ্যান সহজ হয়।