October 19, 2022 - BY Admin

জ্ঞানের রঙে

জ্ঞানের রঙে


রবিবারের এক সুন্দর সকাল, তখন প্রায় ৭টা বাজে। কালী পূজা উপলক্ষে মহারাজ ঠাকুর আর স্বামীজির কাপড়ে রঙ করছেন, আশ্রমিকও রয়েছেন সাথে। এক বড়ো বালতি জলে, হলুদ, গেরুয়া রঙ একটু একটু করে মেশানো হচ্ছে।


মহারাজ: "এই দেখ, একই রঙ কিন্তু কখনও হলুদ কম তো গেরুয়া বেশি, আবার কখনও হলুদ বেশি তো গেরুয়া কম, কিন্তু গন্তব্য তো সেই এক, কাপড়ে রঙ হওয়া। আবার দুটো কাপড়ের মধ্যে কি পার্থক্য দেখ। ওটা কি নরম সুতির, আর এটা দেখ কি.. খসখসে! সুতিরটা সহজেই ধরে নেবে, কিন্তু এইটা ধরবে না সহজে। ঠিক সেইরকম লক্ষ্য এক, জ্ঞানের বিভিন্ন দিক দিয়ে ব্যক্তিবিশেষ মনকে বোঝানো হচ্ছে। জ্ঞান সমান কিন্তু সবাইকে বোঝানোর পদ্ধতি এক নয়। আবার ব্যক্তি যদি সুতির কাপড় হয়, তবে সহজেই জ্ঞানের রঙে সে রাঙিয়ে যাবে কিন্তু ব্যক্তি মন যদি Polestar কাপড় হয় তবে তার সেই রঙে রাঙাতে অনেক সময় লাগবে"l


আশ্রমিক: "হ্যাঁ মহারাজ।"


মহারাজ: "এই আশ্রমেও তাই। কত রকমের কত ধরণের লোক আসছে, যারা আসে অর্ধেক মহারাজকেই দোষ দিয়ে দেয়, মহারাজ আমাদের অত বোঝায় না, ওদের অনেক ভালোবাসে.. এই সব(হাসি)। আরে বাবা বোঝো না কেন, তোমার নেওয়ার ক্ষমতা নেই, ঠিক ওই কাপড়টার মতো। মহারাজ সবাইকে সমান রঙের জলে ভেজাচ্ছেন, তুমি যদি বাবা Polestar হও তো মহারাজ আর কি করবে বল!

আমি কখনও কাউকে বেশি বা কম কিছু দিইনি। যা দিয়েছি তা সমান দিয়েছি।... বুঝলি তো আজ মনে হয় এ রঙ ধরবে না! একটু চিপে দে তো.." 


আশ্রমিক: "হ্যাঁ দিন। কিন্তু যে আপনার কাছে রয়েছে অথচ বুঝেও আপনাকে বুঝছে না তার কি হবে?"


মহারাজ: "দেখ শরীরী সামনে থাকা তেমন কোনো matter নয়। তবুও কেউ যদি সামনে থেকেও জীবনের রস না নিতে পারে, জ্ঞান লাভ না করতে পারে তাতে আমার কিছু করার নেই।

আর যদি দেখিস যে কাউকে আমি বেশি বলছি, বেশি বোঝাচ্ছি তার মানে ভেবে নিস যে তার মাথা বড্ড মোটা, তাকে আমি extra কিছু বোঝাচ্ছি না। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কম বুঝিয়েছে নাকি! ১৮ টা অধ্যায়!!"


আশ্রমিক: "কিন্তু অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে ছেড়ে তো যাননি, না বুঝলেও ভগবানের কাছে পড়ে ছিলেন জানার জন্য।"


মহারাজ: "এটাই তো শ্রদ্ধা রে। বুঝতে যতই দেরি হোক আচার্য বা গুরুর কাছে পড়ে থাকব। এটাই শ্রদ্ধা। এখনও ছোট আছিস শিখতে থাক, বুঝতে থাক। সন্ন্যাসী হবি না সংসারে ফিরে যাবি তোর ইচ্ছা, কিন্তু জ্ঞান লাভ না করে নয়। কাপড় গুলো রোদে দিতে হবে বুঝলি.. নিয়ে যাস পরে।"


আশ্রমিক: "হুম.. ঠিক আছে।"


মহারাজ: "কালকে ক্লাসেও বোঝাচ্ছিলাম যিনি শুনছেন, বুঝছেন তিনিই সেই। এই কান দ্বারা যিনি শুনছেন, এই মুখ দ্বারা যিনি বলছেন তিনিই সেই.."


আশ্রমিক: "কিন্তু মহারাজ, এই কান মুখ দ্বারা যিনি শুনছেন তাঁকে তো আমরা বেশিরভাগই এই শরীরকে মনে করছি। এই শরীরকেই সব, এই শরীরকেই সেই পরমাত্মা মনে করছি।"


মহারাজ: "এটাই তো মুশকিল। দেখ, procedure টা দেখ, এই কানে শব্দ যাচ্ছে কিন্তু কান কি শুনছে? কান থেকে শব্দ brain এ যাচ্ছে সেখান থেকে মনে প্রতিফলিত হয়ে যিনি বুঝে বলছেন তিনিই সেই। এই কান, brain বা মন তিনি নন। চ, হয়ে গেছে, এই কাজটা শেষ হলো।"


আশ্রমিক: "হ্যাঁ চলুন।"