May 06, 2022 - BY Admin

দুসরো না কোই।

দুসরো না কোই।



আজ সকালে ফেসবুক খুলতেই একটা লেখা নজরে পড়লো। ' আম্রপালি '.... সেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক চরিত্র, লেখাটি, তাঁরই সম্বন্ধে। 


আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে, যাঁকে পাওয়ার বাসনায় নাকি এমনিই ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সকলের মধ্যে, যে শেষ অবধি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে তাঁকে পতিতা বানানো হয়!


 ইতিহাসে নারী অবমাননার দৃষ্টান্ত এমন ঢের আছে। কিন্তু আজকের আলোচ্য বিষয় একেবারেই তা নয়, বরং আম্রপালির পরবর্তী জীবনই হোক, আজকের এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ।

 

মহারাজের কাছ থেকে শেখা, গোটা জীবনেও শেষ হওয়া সম্ভব নয়। আর গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া ধীরে ধীরে আমার মধ্যে থেকে কোথায় যে হারিয়ে যাচ্ছে, তা ঠাহর করবার মত শক্তি আমার আর নেই। মহারাজ বলেন, কোন গন্তব্য নেই। 

যতদিন যাচ্ছে, মনে হচ্ছে থাকলেও বিশেষ লাভের লাভ কিছু নেই! পথই এমন সুন্দর, যে মাইলের পর মাইল চলবার পরও ক্লান্ত লাগে না, চলাতেই এর আনন্দ... ঠিক যেন যাযাবরের মত।


তল্পিতল্পা গুছিয়ে পাকাপাকি ভাবে আশ্রমে চলে আসার আগে একদিন আশ্রম থেকে ফোন এল, মহারাজ ডেকেছেন, কিছু জরুরি কথা আছে। হটাৎ এমন জরুরি তলোপে আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়ে গেলাম, কারণ এর আগে এমন কোন আদেশ আমি অন্তত কখনো পাইনি।


  সেদিন আশ্রমে আসার পর মহারাজ আমায় অনেকগুলি বিষয়ে সচেতন করেছিলেন, তারই কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল। নানান বিষয়ে কথা বলতে বলতে  মহারাজ হটাৎ আমায় বললেন:


একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, চামড়া কিন্তু শুধু চামড়াই বোঝে। তাই খুব সাবধান। দেহকে কক্ষণো বিশ্বাস করবেন না। এ হল সবচেয়ে বড় কাল সাপ, একটু unalert হয়েছেন কি সাথে সাথে ফোঁস।


আমি বললাম জানি মহারাজ। কিন্তু এই কথা কেন...


আমার মনের দ্বন্দ্ব বুঝেই যেন, বাক্যটি শেষ হওয়ার আগেই মহারাজ আমাকে বললেন, আর মাত্র ক'টা দিন পরই আপনি আশ্রমে একজন ব্রহ্মচারিণী হিসেবে যোগ দেবেন। সাধু জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন। তাই আমার কিছু জিনিস আগেই বলে দেওয়া দরকার বলে মনে হয়।


**********


আশ্রমে আসার পরও দেখবেন অনেক পুরুষই আপনার সঙ্গ চাইছে, হয়তো শাস্ত্র নিয়েই আলোচনা করতে চাইছে, কিন্তু একান্তে। খুব সাবধান! এই সব ক্ষেত্রে, এমন কি আমি হলেও, সঙ্গে সঙ্গে উঠে যাবেন সেখান থেকে। 

চরিত্র এমন দৃঢ় বানাবেন যাতে আপনাকে দেখলেই লোকে বুঝে যায়, যে এর সাথে এসব চলে না। ঝাঁসির রানীর কথা শুনেছেন তো, তরোয়াল ধরে ঘোড়ায় চেপে বেড়িয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে, রানী রাসমণির ডাকাতদের সামনে নির্ভয়ে দাড়ানোর কথা জানা আছে তো? তারা কিন্তু ভয়ংকর সুন্দরী ছিলেন। কিন্তু তেমনই দৃঢ়। এমন হতে হবে।


এর পরও প্রকৃতির মায়ায় যদি কখন কোন ভুল চুক হয়ে যায় আপনার দ্বারা, তখনও বলবো hold! কোন  ভাবেই সাধনার পথ ত্যাগ করবেন না। এই কথাগুলো এইভাবে সরাসরি হয়তো কেউ বলবে না, কিন্তু এগুলিই সাধন পথের বাঁধা, যা প্রতিটা সাধককে কাটিয়ে উঠতে হয়।


দেখুন শারীরিক কৌমার্যর থেকেও চেতনার কৌমার্য অনেক বেশি important. সব সময় লক্ষ্য রাখবেন, যেন চেতনায় কোন কিছু ঘর না করতে পারে। সাধনায় বিঘ্ন ঘটলে আর ফেরা যায় না তা নয়। তবে অনেক হ্যাপা পোয়াতে হয়। 


মীরাকে দেখুন... একবার ভাবুন, যাকে so called অপবিত্রতা বলা হয়, মীরার সাথে ধরুন তাইই ঘটে গেছে, তা বলে কি মীরা থেমে থাকবেন? এমন কখনো কল্পনাও করা যায়? কক্ষণো নয়।  কারণ তাঁর চেতনা জুড়ে শুধুই রয়েছেন তাঁর গিরিধারি গোপাল, তাই মীরার 'দুসরো না কোই...'


দেখুন শারীরিক শুচিতা, অশুচিতাকে আমরা যেভাবে প্রাধান্য দিয়েছি, এটা তত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এর স্মৃতি আমাদের চেতনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, বারবার আমাদের প্রকৃতিতেই ফাঁসিয়ে দেয়। গীতার সঙ্গ, উপনিষদের সঙ্গ ভুলে সাধক তখন দেহসঙ্গ খুঁজে বেড়ায়! এটাই সমস্যা। শুধুমাত্র এই একটাই কারণে সাধু জীবনে নিজেকে সবসময় সাবধান করতে হয়।শরীরের হরমোনগুলো কিন্তু চেতনার দাবি টাবি কিচ্ছু বোঝে না। ওর তো শুধু একটা দেহ চাই, ব্যাস্! তাই আগেভাগই, সাধু সাবধান!


*********


আম্রপালিকে জীবনের অনেক চড়াই উতড়াই পার করতে হয়েছে, সদ্গুরু লাভের জন্য। আম্রপালির মত প্রতি রাতে দৈহিক নিগ্রহের শিকার না হলেও আমাদের চেতনার বলাৎকার হয়ে চলছে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে।


কেবল কোন এক বুদ্ধই পারেন, এই নিত্য নৈমিত্তিক বলাৎকারের হাত থেকে আম্রপালি তথা আমাদের চেতনাকে নিস্তার দিতে। 


তাই, 'বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, ধর্ম্মং শরণং গচ্ছামি, সংঘং শরণং গচ্ছামি।' 

আমি বুদ্ধের শরণ নিলাম, ধর্মের শরণ নিলাম, সৎসঙ্গ তথা সংঘের শরণ নিলাম...

 যাতে ভেতরে থাকা কালিমা লিপ্ত আম্রপালি চিরতরে মুছে গিয়ে, জন্ম হয় কোন এক মীরার মত সাধিকার, যাঁর গিরিধারি ছাড়া, দুসরো না কোই।