January 17, 2022 - BY Admin

দেহাত্মবুদ্ধি কিভাবে যায়?

দেহাত্মবুদ্ধি কিভাবে যায়?


 ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২১,  ভক্তসঙ্গ

            

 স্থান- অদ্বৈত জ্ঞানপীঠ আশ্রম 


                            

বিকাল পাঁচটা।   


ভক্তসঙ্গে, আজ মহারাজ আলোচনায় বসেছেন, প্রসঙ্গ আধ্যাত্মিক ভ্রমণ। আধ্যাত্মিক গল্পগুজবও চলছে। অন্যদিনের তুলনায় আজকের পরিবেশে, উপনিষদ ক্লাসের সেই গুরুগম্ভীরতার মাত্রা অনেক কম। নানা প্রসঙ্গ চলতে চলতে এক ভক্ত হঠাৎ বলে উঠলেন, 'মহারাজ যাইই বলুন, যতই চেষ্টা করি এই দেহাত্মবোধ কিছুতেই যেন যাবার নয়।'


মহারাজ (সহাস্যে): মনকে মনের মতো ছেড়ে দাও না বাবা। দেখবে, সব সমস্যা, কেমন এমনি এমনি চলে যাচ্ছে.. মন যা চায় একে তাই দিয়ে দাও। তাহলে এ আর সরে সরে যাবে না..


 সভার সবাই একসাথে হেসে উঠলো।


ভক্ত: আজ্ঞে মন তো বারবার দেহেতে ভেসে যায়, বোঝালেও বোঝেনা!


মহারাজ: মনকে বোঝাতে যেও না, তুমি বোঝো..

 তুমি মনকে একটু তোমার থেকে আলাদা করে দেখার চেষ্টা করো। মনকে জোর করে চেঞ্জ করতে গেলে মন তোমার কথা শুনবে কেন? তোমার পিঠে যদি জোর করে কেউ চার বস্তা বালি তুলে দেয়, তুমি তার ভার বইতে রাজি হবে? 

 মন বার বার সরে যায়, কারণ এর কোনও সঠিক লক্ষ্য নেই। মন এমন কিছু খুঁজছে, যাতে সে শান্তি পেতে পারে, একে সঠিক লক্ষ্য দাও। 

 

যাতে সেই লক্ষ্যের সামনে, অন্য যেকোনো কিছু, এমনকি তুমিও ছোট হয়ে যাও। শুধুমাত্র প্রচলিত কিছু রীতিনীতি, জপ-ধ্যান ইত্যাদি দিয়ে আধ্যাত্মিক হওয়ার চেষ্টা করো না। এতে খুব বেশি লাভ কিছু নেই। একটু  ভালো করে বোঝো..


  দ্যাখো তুমি বারবার যে শরীরের কথা বলছো, সেই শরীরটাই আসলে সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা। এই যে শরীর.. আমরা ভাবছি বটে, একে দিয়ে অনেক ভোগ করে নেবো.. কিন্তু আমাদের সেই স্বাধীনতা কোথায়? কখনো ভেবে দেখেছো? একটু বেশি জাঙ্ক ফুড খেলেই লিভারটা অল্প বয়সে অকেজো হয়ে যাবে, শারীরিক ভোগ অর্থাৎ দেহসঙ্গ বেশি হলে,শরীরের বারোটা বাজতে বেশি দিন লাগবে না। তো ভোগটা করবে কোথায় কখনো ভেবেছো?

  এই দেহকে  ঠিক রাখার জন্যই তো প্রতিদিন তোমরা ছুটে মরছো। টাকা income (উপার্জন)এর জন্যই, অন্যের কাছে চাকরবৃত্তি, অন্যকে তেল মারা.. সবই ঘুরে ফিরে সেই দেহের জন্যই! এ এমন জিনিস যে একে ঠিক করে ভোগ করতে পারবে না। কারণ, তাহলে রোগে তোমায় শেষ করে দেবে। আর একে ছাড়তেও পারবে না। কারণ শরীর না থাকলে কিসের সাধনা, কিসের জপ- ধ্যান?


শরীরকে ততটাই importance (গুরুত্ব) দাও,  যতটা এ deserve(প্রাপ্য) করে। শরীরের জন্য ভাবাও প্রয়োজন। তবে, এটা মনে রেখো, শরীর হবারও আগে তুমি চেতন। তাই শুধু শরীর হয়ে থেকো না!


 আগে নিজেকে প্রশ্ন করো, আমি কে? আমি কি হয়ে বাঁচছি! আগে নিজেকে দেখো, নিজেকে বিচার করো নিরপেক্ষভাবে। এর থেকে, তুমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারবে, কোন্-টা ঠিক আর কোথায় সময় দেওয়া ঠিক নয়। যেকোনো কিছু করবার আগে বিবেক আরোপ করো, শুধু মন হয়ে থেকে যেও না।

 

শীতের সকালে বিছানা ছাড়তে শরীর বা মন কারুরই তেমন ভাল লাগে না। এখানে বিবেক আরোপ করো। দেখবে যদি সত্যিই এমন লক্ষ্য জীবনে আসে, যার জন্য নিজেকেও ভুলে যাওয়া যায়, তবে এসব বিষয়গুলো একেবারে ছোট হয়ে যাবে মনের কাছে। দেখবে আর শরীরকে বোঝাতে হচ্ছে না, যে ওঠ! পাঁচটা বেজে গেছে। শরীর, মন নিজে থেকেই উঠে পড়ছে সময় মতো..


সঠিক লক্ষ্য স্থির করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উপর উপর কিছু বদলানোর চেষ্টা করে যেও না। নিজেকে জানো, নিজেকে বোঝো। মনকে একবার সঠিক জিনিসটা দিয়ে দাও.. দেখবে মন আর কোথাও সরছে না।


 সকলেই চুপ।