November 17, 2022 - BY Admin

নিষ্কাম কর্মের মজাই আলাদা

বিবেক সম্মেলন হবে কৃষ্ণনগরে। অদ্বৈত জ্ঞানপীঠের এই প্রথম সেমিনার। স্বভাবতই কারোরই কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তো কৃষ্ণনগরে থাকার সুবাদে  arrangement এর দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। আমিও সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। 

অনলাইন এবং অফলাইন দু'ভাবেই ফর্ম ফিলাপের ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু সেই সংখ্যাটা কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছাচ্ছিলো না। হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। তখনই মহারাজের একটা কথা মনে পড়ল- "যেটা সঠিক কর্ম তা করে যেতে হয,  তার ফল নিয়ে ভাবতে নেই, ফল যা হবার হবে"।নতুন উদ্যমে আবার arrangement  করতে লাগলাম । সেমিনার শুরু হবার চারদিন আগে থেকে হঠাৎ করে প্রচুর ফর্ম ফিলাপ হতে শুরু করল। এমনকি কয়েকজন ফোন করে আমার কাছ থেকে ফর্ম এর হার্ডকপি নিয়ে গেল। এবার বুঝতে পারছিলাম সেমিনারে ভীড় বেশ ভালই হবে। কিন্তু সেমিনারের সময় যতো এগিয়ে আসছিলো,মনের মধ্যে টেনশনের একটা চোরাস্রোতও খেলা করছিল। এতো বড় দায়িত্ব!  ঠিকভাবে পালন করতে পারব তো? মহারাজ আসছেন, ওনার সন্মান রক্ষা করতে পারব তো? 

যাইহোক, বুক ঠুকে কাজে লেগে গেলাম। মহারাজ এলেন। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। হলভর্তি শ্রোতা, স্টেজের ওপর মহারাজ। টানা তিন ঘন্টা চললো সেমিনার। সকলের স্বতঃস্ফূর্ত প্রশ্ন  এবং মহারাজের অসাধারণ বোধপূর্ণ উত্তরে সভা জমে উঠলো। কিভাবে সময় পেড়িয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।ঘোর ভাঙলো যখন সভার শেষে করতালি দিয়ে সবাই মহারাজকে অভিবাদন জানাল। এত স্বতঃস্ফূর্ত করতালি !!!  কৃষ্ণনগর তথা নদীয়াবাসী ধন্যবাদ। 

সেদিন বুঝতে পারলাম নিষ্কাম কর্মের practical application. নিজের জন্য কিছু করিনি এই seminar purpose-এ। শুধু খেটে গিয়েছি,যদি মহারাজকে শুনে কিছু মানুষের জীবনে উন্নতি হয়। এই হল ভর্তি দর্শক আর হাত তালির আওয়াজে মন ভরে উঠলো। নিষ্কাম কর্মের এত আনন্দ সেই প্রথম বুঝতে পারলাম।

মহারাজকে বললাম,মহারাজ এই আনন্দ জানতাম না।


মহারাজ একটু গম্ভীর হয়ে বললেন,যদি জিজ্ঞাসুরা বেশী না আসতো,তখনও কি এমনই উৎফুল্ল থাকতে? সত্যি বলো!


আমি- হা।হয়তো....একটু হতাশ হতাম।


মহারাজ - আমি বলছি না,তুমি সকাম।কিন্তু,এই নিষ্কামতার মধ্যে যেটুকু উৎফুল্লতা মেশা আছে,হতাশাও ততটাই হতো।ঐটুকু  ফলের আশা থেকে যায়।আরও শোনো,ওটা আমারও থাকে।


আমি- কি বলছেন,আপনারও এমন হয়?


মহারাজ - হা,আলবাত হয়।তবে কি মিথ্যা বলছি? মানুষ তো।যতটুকু আমি ব্যক্তি ততটুকু সকামতা থাকবেই।সবার থাকবে।তাই,বোলো না পুরোপুরি নিষ্কাম।তবে,পার্থক্য কি জানো?


আমি- কি?


মহারাজ- আধ্যাত্মিক ব্যক্তি সৎ  ও সচেতন হয়। ঐ সকামতাকে সে অস্বীকার করে না আর ঐ বিষয়ে সচেতন থাকে।তোমার ঘরে চোর আছে,এটা জানা থাকলে ও সচেতন থাকলে কি তুমি চোর থাকা সত্বেও একরকম চুরি থেকে মুক্ত হয়ে গেলে না?


আমি- হা।কিন্তু,সম্ভাবনা তো রইলোই!!


মহারাজ - ওটা মানুষ হওয়ার punishment +জীবন বাঁচার কৌশল লাভের তাগিদ।জীবন্মুক্ত সে,যে আত্মায় নিষ্কাম ও প্রকৃতির সকামতায় সজাগ।মাথায় রাখো, আমরা দুইই থাকবো।তাই,যে আত্মার প্রেমিক,সে প্রকৃতিতে সচেতন হবেই।