প্রশ্ন:- আমি একজন ছাত্র, পড়াশোনা ইত্যাদি কাজে মন না লাগিয়ে, যদি প্রকৃতির স্রোতে ঘুম, মজা ইত্যাদি ইন্দ্রিয়গ্রাহী বিষয় নিয়ে যদি ভেসে বেড়াই, তবে কি জ্ঞানের অভাবে হতাশা, ডিপ্রেশন ইত্যাদি তৈরি হবে না? যেগুলি আত্মিক শান্তি দেবে সেগুলির জন্য মায়ার সাথে যদি যুদ্ধ না করি, তাহলে কি দেহ থেকে আত্মার যাত্রায় পৌঁছাতে পারবো? প্রণাম নেবেন মহারাজ। (সম্রাট নস্কর, দক্ষিণ 24 পরগনা)
মহারাজ:- যদি তোমার প্রকৃতিতে শুধু ঘুম ও মজাই থাকতো, তাহলে জিজ্ঞাসা করতে না। মজায় মজে থাকতে! জীবন সৃজনাত্মক বা গঠনমূলক হতে চাইছে বলেই, এই দ্বন্দ্ব বা প্রশ্ন আসছে। এটা জীবনের অনুগ্রহ।যারাই আন্তরিক জিজ্ঞাসার বৃত্তি পেয়েছেন, তারা সকলেই নিজেকে অনুগৃহীত জানবেন।
যদি জ্ঞানের কোন necessity জীবনে না থাকতো, তবে হতাশা, ডিপ্রেশন নিয়ে আপত্তিও উঠতো না। এত মানুষ তো ডিপ্রেশন, হতাশার মধ্যেই জীবন কাটাচ্ছে। কিন্তু, কে বা কতজন আর আন্তরিক লড়াই করতে চাইছে?
এই যে "যুদ্ধ যুদ্ধ" বলা হয়, তা এক ভ্রমমাত্র। ভাষার অপারগতা।যথার্থ সংগ্রাম বিরক্তি থেকে নয়, প্রেম ও শান্তি থেকে হয়। লোকে বলে "শান্তির জন্য যুদ্ধ চাই"। আমি তাদের বলি, "শান্ত না হয়ে অশান্ত ব্যক্তি কিভাবে লড়বে?" ক্ষত্রিয়তা বা যোদ্ধার মূলগুণই হলো, শান্ত মন। উত্তেজনায় জানা বিদ্যাও ভুল হয়।
যাকে তুমি সংগ্রাম বলছো, তা আসলে নিজের প্রতি অগাধ প্রেম ও বোধজনিত স্থিরতা। যুদ্ধে শত্রু নিধন হিটলারের পথ। ভারত বলে দেশমাতৃকার প্রতি প্রেমই যুদ্ধ করায়। তাই, বলা হয় দেশমাতৃকার রক্ষা।
তেমনি, "তুমি নিজের সব বুদ্ধি, বিচার দিয়ে নিজেকে গঠন করতে যা উচিত মনে করছো, তা করাই সাধনা।" যদি নিজের প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তখনই হয় হিংসা বা আত্মঘাত।
দুনিয়ার 99.99% মানুষ ঐ অর্থে আত্মঘাতী। কারণ, না হলে পরমানন্দের দুর্লভ জীবন এত যন্ত্রণায় কাটতো না। শান্তি, নিশ্চিন্ততাকে ছেড়ে যে রয়েছে, সে শারীরিক, মানসিক উভয় স্বাস্থ্যই হারিয়েছে।
তাই "মায়া, মায়া" রটে নেওয়া ছাড়তে হবে। চোখ খুলে দেখতে হবে কোনটা আমাকে গড়ছে আর কি আমাকে ভাঙছে। যেদিন এই দেখা নিরপেক্ষ ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে যাবে, সেদিন কোথাও পৌঁছাতে হবে না, নিজের উপর জোর করতে হবে না। আপনিই আত্মা বা পরম শান্তি তোমারই মধ্যে থেকে ধরা দেবে।