দিনটা ছিল ২৩/০৬/২০২১, বুধবার, স্থান - পূর্ব বর্ধমান
Truth unfolds YouTube Channel -এ (যৌবনে আধ্যাত্মিকতায় বাঁধা দেওয়া হয় কেন?) এই বিষয়ে পূজণীয় মহারাজের বক্তৃতা শোনার পর এক গভীর সংশয় ওঠে মনের মধ্যে।
ভিডিও তে এক জায়গায় উনি বলেন যে- "বন্ধুদের সাথে একবার চিল, মৌজ, মস্তি করা বন্ধ করে দাও তাহলেই বুঝে যাবে কে তোমার প্রকৃত বন্ধু? সত্যের পথে যে বা যারা সহায়ক নয়, তাদের বন্ধু বলি কিভাবে? প্রকৃত বন্ধু তো সে, যে তোমার সামনে আয়না ধরে তোমাকে তোমার স্বরূপ চেনাতে।"
কপালে চিন্তার ভাঁজ, মাথায় হাত দিয়ে বসে ভাবছি এতদিন যেভাবে জীবন কাটিয়েছি তাতে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা এরকম তো কখনও ছিল না। সেই হিসবে দেখতে গেলে আমার বন্ধুত্বের লিস্টে যারা আছে তারা কেউই আমার প্রকৃত বন্ধু নয়। তাহলে কি করবো সম্পর্ক রাখবো না? কিন্তু তারা তো কেউ আমার কোন ক্ষতি করেনি, বিপদে আপদে পাশে থেকেছে, সহায়তা করেছে। তাহলে এখন থেকে কিভাবে মিশবো এই সম্পর্ক গুলোর সাথে যাদের আমি আমার এত প্রিয় বন্ধু বলি???
সময় রাত ৯ টা,
এই প্রথমবার, পূজণীয় মহারাজের সাথে ফোনে কথা বলবো, খুব nervous লাগছে। একেবারেই ভালো বক্তা নই, তাই এই সমস্যা যদি ঠিক করে বলতে না পারি মহারাজকে, তাই আগে থেকেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলাম।
ফোন করার পর মহারাজকে প্রণাম জানিয়ে আমি আমার এই সমস্যার সমাধানের দিশা জানতে চাইলাম। তো সেদিন ফোনে মহারাজ আমাকে যা বলেছিলেন, আমি সেটা লিপিবদ্ধ করেছি, যদি আমার মতোই অন্য কারোর কাজে লেগে যায় এই ভেবে ----
১. "বন্ধুত্বের দাম, নিজের সঠিক জীবন গঠনের থেকে মূল্যবান নয়।"
২. "মুদির দোকানে গেলে তুমি কি দোকানদারের সাথে কাজ মিটে যাওয়ার পর গাল গপ্পো করো? তেমনি বন্ধুদের সাথে সেই utility বুঝে মিশবে, যতটা সম্ভব মেশা যায়। তাদের সহায়তা অবশ্যই করবে, তারাও যেহেতু তোমার পাশে থাকে, থেকেছে। সম্পর্ক যে Basis এ তুমি রাখতে চাইছো তা বুঝে নিয়ে সেইভাবে মিশবে তাদের সাথে। ছাঁকতে থাকো।"
৩. "সহায়তা রাস্তার ভিখারীকেও করো, তার বন্ধু হয়ে যাও। তা বলে কি তাকে মদ খাওয়ার জন্য টাকা দেবে? তা কখনই নয়।"
৪. "শত্রু আলাদা করে কেউ হয় না। যে যত বেশি বন্ধু হয়, সে ততটাই শত্রু হয়। বন্ধুই শত্রু হয় এটা জানবে।"
৫. "সত্যের পথে ১০০ জন বন্ধু হয় না, ১ জনই হয় আর তোমাকে তা খুঁজতে হবে না। তুমি সত্যের পথে চলতে থাকো তুমি সত্যের সঙ্গী কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবেই।"
৬. "নিজের বাবা, মা আপন নয় তো বন্ধু অনেক পরের কথা। এটা নিয়ে এত ভাবনা চিন্তা করার কোন দরকার নেই। তোমার approach বন্ধুদের সামনে রাখো, "গীতা", "উপনিষদ্"- এর ৪ টে শ্লোক শুনিয়ে দেবে, এমনিই পালিয়ে যাবে। সম্পর্ক তাদের সাথে কিভাবে রাখবে? কষ্ট করে তোমাকে ভাবতে হবে না। তারা এমনিই সরে যাবে তোমার জীবন থেকে। শুধু সরবেই না গাল দিতে দিতে অভিশাপ দিতে দিতে সরবে।"
৭. "সবারই জীবনেই একটা phase থাকে, এটাও তোমার জীবনের একটা phase, যার জন্য এরকম কিছু বোধ হচ্ছে, সংশয় উঠছে মনে। এটা স্বাভাবিক, আর এটাকেই সত্যের কৃপা ও আশীর্বাদ জেনো। জানবে যে সংশয় উঠছে সেটাই মায়া, একে চিনতে শেখো।"
এত স্পষ্ট সত্য সহজভাবে বোঝানোর পর, শেষে মহারাজ আর একটি কথা বলেছিলেন -
"বেশিদিন বাঁচবো এই আশা ছেড়ে দাও, যতদিন তোমার হাতে আছে নিজের জীবনকে/শরীরকে ঘষে দাও। শাস্ত্র (উপনিষদ্) পড়ো, স্বামীজীকে পড়ো, আরও গভীরে ঢোকো, কথামৃত বেশি করে পড়ো, দেখো ঠাকুর কি বলতে চেয়েছেন।"
সত্যি, এই positive approach নিয়ে চলার পর আজ আমি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, যে বন্ধুরা আমার একদিন এত মাথা ব্যথার কারণ ছিল, আজ আমাকে তারা কেউ পাত্তা দেয় না, একঘরে করে দিয়েছে। আর যার সাথে এটা ঘটবে, জানবেন তারা সব মিথ্যারই সাগরেদ ছিল, তাই ভেগেছে।