*প্রেম থাকলে, সব সম্ভব*
স্থান - অদ্বৈত জ্ঞান পীঠ আশ্রম, দিয়াড়া
ব্রহ্মচারী অনিকেত, আশ্রমের সর্বকনিষ্ঠ ব্রহ্মচারী। সকলের বড়ো প্রিয়, বড়ো আদরের.. তো মহারাজের কা কথা!
কাজের তার অন্ত নেই। তবে প্রিয় কাজ অবশ্যই, গলা ছেড়ে গান গাওয়া, পেটপুরে খাওয়া, আর মন খুলে হাসা! এই নিয়ে সে বেশ আছে.. শুধু মাঝে মধ্যে বাদ সাধে, যেদিন সে খেতে বসে জানতে পারে, আজ রান্নায় সবজির পরিমাণ বড্ড বেশি! সেদিন.... 'আমার খিদে নেই....' বলে তর্ তর্ করে উঠে গিয়ে ঘরে এমন খিল্-টি দেয়! শত খুঁজলেও তাঁর টিকিটি পাওয়ার জো থাকে না!
কিন্তু এই বিদ্যায় সে এখনো নেহাতই খেলো! কারণ, খিল্ খুলে কিল্ দেবার জন্য যিনি সদা প্রস্তুত, তিনি আর যাই হোন্, না খাইয়ে ছাড়বার পাত্র মোটেই নন!
আজ দুপুরে, এমনই এক ঘটনা..
' আমি খাবোওওওওওও নাআআআআআ!!!!!
সবাই মিলে , 'ওরে আয়রে সন্ধ্যেবেলায় আলুর পরোটা ভেজে দেওয়া হবে.. সিঙ্গারা আনা হবে..'
এহেন কত তোষামোদ!!!! কিন্তু তাকে খাওয়ানোর সাধ্য কার!
এমন সময় হঠাৎ গম্ভীর গলায় মহারাজের ডাক...
"পুচকে!" (ব্রহ্মচারী অনিকেতকে মহারাজ এই নামেই ডাকেন)
ব্রহ্মচারী অনিকেত (ঘরের ভেতর থেকে একটু মিয়ানো স্বরে): আমার খিদে নেই!
মহারাজ: তাড়াতাড়ি খেতে আয়!!
সব চুপ!!!!!
এরপর, একটা থালায় ভাত, ডাল, একগাদা সবজি আর কিছু নিমবেগুন ভাজা সাজিয়ে, সেই যে মহারাজ ঘরের ভিতরে ঢুকলেন.. নাক সিঁটকালেও 'পুচকে'-র আর সাধ্য কী না খেয়ে থাকার!
মা যেমন তার দস্যি ছেলেকে নিজের হাতে ভাত মাখিয়ে কতো গল্প করে, বুঝিয়ে শুনিয়ে ভুলিয়ে-ভালিয়ে খাইয়ে দেয়... এই আশ্রমে প্রায়ই এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এসব ঘটনা এখানে নিতান্তই সরল...
মহারাজ বলেন, প্রেম থাকলে, সব সম্ভব।
এই আশ্রমও সত্যিই যেনো এক প্রেমের হাট..এখানে গোটা দিন শুধু প্রেমেরই বিকিকিনি চলে.. ব্যাপারী হলেন আমাদের সকলের প্রিয় মহারাজ।
তিনি আরো বলেন, প্রেম কখনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। প্রেম স্বরূপ হয়ে যেতে হয়.. তবে যেইই তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে সেইই এর ছোঁয়ায় ধন্য হয়ে যাবে।
তাঁর কৃপায় আমরা সকলেই ধন্য।
তবে একরোখা অনিকেত, মহারাজের প্রেমের শাসনে কেবল একাই ধরাশয়ী নয়!
সকল ব্রহ্মচারী, গৃহী ভক্তকুল.. সকলেই যেন তাঁর প্রেম- স্পর্শে ধীরে ধীরে সজীব হয়ে উঠছে।
এখানে এসে সব দুঃখ ঝেড়ে ফেলে, সকলে মন খুলে হাসে।
যেন এক প্রবল আনন্দের ধারা বইছে দিয়াড়ার এই ছোট্ট আশ্রমটিকে জুড়ে।
আর তাইতো সব ছেড়ে বারেবারে ছুটে আসতে হয়।