বৃত্তির জন্মই পুনর্জন্ম...
ভক্তসঙ্গ
স্থান : অদ্বৈত জ্ঞান পীঠ, দিয়াড়া
তারিখ :১৬.০২.২০২২
আজ মাঘী পূর্ণিমা। স্বামী অদ্ভুতানন্দের আবির্ভাব তিথি।বিকালে আশ্রমে নিত্যদিনের কাজকর্ম চলছে। এই হট্টগোলের মধ্যে একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। কিছু প্রারম্ভিক কথাবার্তার পর প্রশ্ন করলেন,
'পরজন্ম কি? এজনমের পাপ পুন্য কোথায় যায়?'
মহারাজ হেসে উত্তর করলেন, 'ওসব কিছু না। এই সময়ের দুর্বলতাই পাপ।'
ব্যক্তি : কিন্ত, কিছু মানুষ তো বিলাসিতায় ও নির্দ্বিধায় জীবন কাটিয়ে দেয়...
মহারাজ : ওটা আপনার হিসাব। উপরিউপরি ওরকম মনে হয়।
ব্যক্তি : (একটু ব্যগ্রভাবে) কিন্তু ধরুন, দুটি এমন শিশু যদি জন্মায় যে একজন সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাল, আর একজন বস্তির দরিদ্র ঘরে বিকলাঙ্গ জন্মাল, তাহলে কি তা পূর্বজন্মের কর্মফল অনুসারে??
মহারাজ : দেখুন, প্রকৃতি এক নিরন্তর প্রক্রিয়া। এ প্রকৃতির বিভিন্নতা মাত্র। কিন্তু, প্রকৃতি শান্তি কাউকেই দেয়নি। কেউই জ্ঞান পায়নি। আমরা অর্থ বড়ই ভালোবাসি বলে মনে করি যার টাকা আছে, সে খুব খুশি। বরং যার আছে, তার চিন্তাও আরও বেশি। অন্যদিকে, গরিবের টাকা নাই ও সে ভাবে ধনী সুখী, এবং অতিরিক্ত অর্থের পিছনে ঘুরে মরে। তাই, প্রকৃতি শান্তি কাউকেই দেয়নি। আপনার জীবনে বোধ এলে তবেই শান্তি আসে। তাই মুক্ত হয়ে বাঁচাই জীবন।
ব্যক্তি : তবে পাপ পুণ্য কি?
মহারাজ : চেপে চেপে জীবন কাটানোই পাপ। না বুঝে চলার নামই পাপ। জীবন পূর্ণতা চায়, জ্ঞান চায়। আপনি যদি তাকে না দেন, তবে তাই পাপ। প্রকৃতি চায় আপনি তার পারে চলে যান। একমাত্ৰ তাকেই পুণ্য বলতে পারেন।
ব্যক্তি : (ইতস্ততভাবে) তবে যে গৌতম বুদ্ধ তার জাতকের কাহিনীতে জন্মান্তর সম্বন্ধে বলেছিলেন, তা আসলে কি?
মহারাজ : ওটা বুদ্ধদেবের বোঝানোর ভঙ্গিমা। এটা তার জন্যই প্রযোজ্য যে আধ্যাত্মিক পথে কিছুটা এগিয়েছে। বুদ্ধদেবের থেকে বেশি আর কেউ জানতেন না যে পুনর্জন্ম বলে কিছু নেই। উনি বলতে চেয়েছিলেন, তোমার দেহমনের মধ্যেই যাবতীয় পুরাতন সংস্কার আদিম কাল থেকেই রয়েছে। যে বৃত্তি একটি গাছ, একটি পতঙ্গ, একটি প্রাণীর মধ্যে রয়েছে, তাই সঞ্চিত হয়ে রয়েছে তোমার কোষে কোষে। এই সংস্কার ব্যক্তিগত নয়। জীবের মধ্যে এই বৃত্তির পুনরাবৃত্তি কেই তিনি পুনর্জন্ম বলে বোঝাতে চেয়েছেন। এর সাথে ব্যক্তিগততার কোনো সম্পর্ক নেই।
ব্যক্তি : (তৃপ্তিতে) মহারাজ, ঠিক আছে। আজ তাহলে আসি।
মহারাজ ইশারা করলে ব্যক্তি প্রস্থান করলেন। অন্যান্যরা কাজের ফাঁকে মহারাজের এই কথোপকথন শুনে গভীর ভাবনায় বিভোর।