ব্রহ্মচর্য্যের গুরুত্ব
শ্রীশ্রী মায়ের তিথি পূজা
২৬ শে ডিসেম্বর
স্থান - অদ্বৈত জ্ঞান পীঠ আশ্রম
আজ মায়ের ১৬৯ তম তিথি পূজা। কয়েকদিন ধরে আশ্রমে পুজোর প্রস্তুতি চলছে। গোটা আশ্রম জুড়ে সে যেন এক হুলুস্থুল কাণ্ড। সকলেই ব্যস্ত। আশ্রমিক ও ভক্তদের অবাধ বিচরণ.. একদিকে চলছে ভোগের জোগাড়, আরেকদিকে বসে মেয়েরা সবজি কাটছে, উপরে চলছে পূজোর জোগাড়, অন্যদিকে ফুল দিয়ে গোটা আশ্রম সাজানো হচ্ছে, আরও নানান খুঁটিনাটি কাজ.. সমস্ত আয়োজন ঠিক ঠিক চলছে কিনা, তার তদারকি করছেন ব্রহ্মচারীরা। মায়ের তিথি পূজোতে, যে দুজন নতুন স্ত্রীলোক ব্রহ্মচর্য্য ব্রত নেবার সংকল্প করেছেন, আজ তারই দিন। তাই ভোর বেলা স্নান করে নতুন শুভ্র বস্ত্র পরিধান করে দুজন ব্রহ্মচারিণী মহারাজের ঘরে প্রবেশ করলেন। মহারাজ দুজনকে বসতে বললেন। তারা দুজনে হাঁটু গেড়ে মহারাজের সামনে একটি আসন পেতে বসলেন। ঘর একেবারে নিস্তব্ধ। দুজনেই মাথা নিচু করে মহারাজের সামনে একইভাবে বসে.. কারুর মুখে কোন কথা নেই। সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে মহারাজ বলা শুরু করলেন.......
দ্যাখ্, আজ থেকে তোরা এই যে সাদা কাপড় পরা শুরু করলি, ভাবিস না এটা শুধু একটা কাপড়। এর দাম অনেক.. এ যেমন শান্তির প্রতীক, তেমনি পবিত্রতারও প্রতীক। নিজেদের মনকে সবসময় পবিত্র রাখবি। তার মানে এই নয় যে, মন কখনো নিচের দিকে নামবে না.. মনের স্বভাবই নিচের দিকে নামা। এই বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকবি। মনের উপরে গিয়ে এর কাজকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করবি। তবেই না ব্রহ্মচর্য্য!
যখন এর দাম দিতে শিখবি, দেখবি.. এই কাপড়টাই তোদের কতদিক থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে চলে গেছে।
আজ থেকে তোদের ব্রহ্মচর্য্যের শুরু। ভাবিস না যে, বিরাট কিছু ঘটে যাবে বা বিরাট কিছু করে ফেলবি। কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখিস শুধু.. ব্রহ্মচর্য্য, সন্ন্যাস জীবনের আগের প্রস্তুতি। এই সময়ে নিজের মনকে খুব ভালো করে মেপে-ঝুপে নিতে হয় যে, ত্যাগের জন্য, বহুজনহিতায়, বহুজনসুখায়
নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য মন কতটা প্রস্তুত!
যখন যা অসুবিধা হবে, যেখানেই আটকাবি, প্রশ্ন করবি। যদি এমন কিছু মনে হয়, যা হওয়া উচিত নয় বলে মনে হয়েছে কিংবা মন যদি কখনো নিচের দিকে নেমে যায় কিংবা দেহ বোধ জাগে, আমার সাথে আগে share (ভাগ) করবি।
এসব জিনিসকে মাথায় বা মনে এতটুকুও জায়গা নিতে দিবি না। ব্রহ্মচারিণীর দায়িত্ব অনেক.. তাকে কি ঠিক, কি উচিত, কোনটা অনুচিত - তা নিজেকে বোঝাতে হয় এবং বোঝবার পর অন্যকে বোঝানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। তোরা এই কাপড়ের ঠিক ঠিক মর্যাদা রাখবি, এইই আমার বিশ্বাস।
এখন তোরা আয়.. তোদের তো আবার আজ পূজো করতে হবে। কতো দায়িত্ব! পালা! পালা!
গুরুদেবের চরণ-ধুলি নিয়ে দুজন ধীরে পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।