November 27, 2022 - BY Admin

মরে যাও,তবুও যেন কাজ না থামে

মহারাজ ঋষিকেশে বেড়াতে গেছেন কয়েক দিনের জন্য। তাই, এই কটা দিন আশ্রম দেখাশোনার দায়িত্ব  একজন আশ্রমিক ব্রহ্মচারীর ওপর। প্রতিদিনই  অল্প বিস্তর মহারাজের সাথে ফোনে কথোপকথন হয় ব্রহ্মচারীর। কাজ ১ বিন্দুও থামেনি।মহারাজের নজরদারিও থামেনি। একটাই বিষয় থাকে  বেদান্তের প্রচারে কর্ম, উপনিষদের জনমানসে প্রসারের কাজ কিভাবে আরো দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তাতে আত্মোৎসর্গ- তা নিয়ে।


মহারাজ:- আমাদের ইউটিউবের ও প্রচার কাজে যে সমস্ত স্টাফ্ কাজ করছে (salary basis)-এ, তাদের মধ্যে থেকে আমাদের যে স্টাফ্ পদের স্বেচ্ছাসেবক আছে, তা কমাতে হবে বা তাদের যে ন্যূনতম পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে, তা কমাতে হবে।আমাকে, তোমাকেই দরকার হলে রাত জেগে কাজ করতে হবে। কি রাজি তো?


ব্রহ্মচারী:-সে রাজি। কিন্তু কেন মহারাজ?


মহারাজ:- কারন, আমাদের  ইউটিউব থেকে যে সামান্য নিশ্চিত আয় হচ্ছে প্রতি মাসে, যা টাকা আসছে, তার থেকেও স্টাফ্ -দের Total Salary বেশি। তো কিভাবে আমরা চালাবো? শেষে তো salary unpaid থেকে যাবে। কেউ যদি তাতে রাজি থাকে, তবে থাকুক। নাহলে আগেই জানিয়ে দাও। বাকি যতক্ষণ পারব, আমিই করব। আমার প্রণামীতে চলছে যেন-তেন প্রকারে। তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই, যারা অনিশ্চিতকে নিয়ে চলতে পারবে, তারাই থাক্।  

আমরা সাধু, ব্রহ্মচারী ও আশ্রমিকদের কথা তো ছেড়ে দাও, ধরলে আমরাও তো এত খাটছি youtube , website-এর পেছনে আমাদেরও তো স্টাফ্ হিসাবে salary থাকা উচিত, সেটা তো ধরাই হচ্ছে না। আমরা তো এই কাজটা থেকে কোন লাভ করতে চাইছি না। এই কাজটার থেকে মহৎ কর্ম(বোধদান) কিছু আমার কাছে আর নেই। তাই, যা পারব করে যাব। তুমি ভাবো- কাদের না রাখলেও তোমার ইউটিউব, ওয়েবসাইটের কাজ চলে যাবে।


ব্রহ্মচারী:- হ্যাঁ বুঝতে পারছি মহারাজ কিন্তু স্টাফ্ কমলে তো আমার কাজেও ব্যাঘাত ঘটবে।



মহারাজঃ- তবে কি করবে?নিজের efficiency বাড়াও।রাত জাগো। Hardly মরে যাবে। যদি তা না পারো এসেছো কেন? আমাকে দাও extra যা কাজ। বেঁচে তো আছি। আমি তো এই কাজটার জন্য সব রকম co -operation করতে তৈরী।রাতের ২ ঘন্টা কম ঘুমালে, ১ রাত না ঘুমালে এমন কোন ক্ষতি নেই।

তাছাড়া উপায় নেই। তোমার কাছে যদি কোন রাস্তা থাকে বলো?


ব্রহ্মচারী:- না। আমার কাছে এই মুহূর্তে কোন উপায় নেই।  আমরা যে এত পোস্ট ছাড়ছি ভলেন্টিয়ারের জন্য বা যে কোন প্রকার সাহায্যের জন্য কেউ তো এই মহৎ কাজে এগিয়ে আসছে না actively,  কয়েকজন ছাড়া। আমরা তো নিজের জন্য কিছুই করছি না। কেন যে আসছে না, বুঝতে পারছি না।


মহারাজ:- তোমরা প্রাণপাত করো তো দেখি!! তোমাদের এবং তোমার  ভলেন্টিয়ারদের কারোরই কোন প্রাণান্ত Dedication নেই। প্রেম নেই।প্রেম অঘটন ঘটায়। Planning, arrangements এর তীব্র অভাব। বাংলার বাইরে এমন নয়। আমি ঋষিকেশে যে আশ্রমে আছি সেখানে মাত্র পাঁচ জন স্টাফ্। এত বড় আশ্রম চালাচ্ছে।


ব্রহ্মচারী:- অবাক হয়ে বলল,  বলেন কি?  কিভাবে মাত্র পাঁচ জনে মিলে আশ্রম চালাচ্ছে?  হয়তো ওদের কোন হেড অফিস আছে যেখানে  official staff -রা আছে!!


মহারাজ:- না কোন Head office  নেই। একজন বৃদ্ধ ব্রহ্মচারী আছেন। Proper System আর Dedication থাকলে সব হয়। এখানে Culture আছে। এখানে মানুষেরা spirituality অতদূর বুঝুক- না বুঝুক Dedication আছে, শ্রদ্ধা আছে, তাই কাজটা নিরবচ্ছিন্নভাবে করে চলেছে। এখানে  দেখছি সবকিছু বড় বড় দায়িত্ব Volunteer-দের ওপর। Volunteers-রা এসে sincerely কাজ করছে কোন টাকা ছাড়াই আশ্রমের কাজ জেনে। আর বাংলার Culture Totally ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাংলায় মানুষের মধ্যে  শ্রদ্ধা আর Dedication কমছে।দেখো, প্রেমই পথ বের করে।



ব্রহ্মচারী : সেটাও ঠিক,  আশ্রমে সপ্তাহে একদিন মাত্র উপনিষদের ক্লাসের শেষে প্রার্থনা হয়। সেই দিন ঠাকুরের জন্য মালাটাও কেউ দায়িত্ব নিয়ে আনতে পারে না, বার বার ফোন করতে হয় একে... ওকে.... তাকে....।  কেউ যে দায়িত্ব নিয়ে এইটুকু কাজ করবে, সেই রকম sincere মানুষও নেই।


মহারাজ:- আসলে যে চপ ভাজে, তার হাতে হীরে পড়ে গেছে। এরা বুঝতে পারছে না যে, এরা কি পেয়ে গেছে। এরা খুব সহজেই দামি জিনিস পেয়ে যাচ্ছে, তাই মূল্য দিতে পারছে না। যে জিনিস সহজেই হাতে পেয়ে যায়, তার মূল্য কেউ দিতে পারে না।ভারতও বনজঙ্গলে থাকতে থাকতেই বেদান্ত পেয়ে গিয়েছিল। তাই, তার মূল্য দেয়নি। আজও তাই।


ঠিক আছে, তুমি শোনো শুক্রবারে যেই আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসবে minimum Mandatory কিছু ফি নাও। কারণ, টাকাই মানুষের কাছে মূল্যবান বস্তু তাই দাম দিয়ে যখনই কথা বলতে আসবে তখনই তার Seriousness থাকবে, না হলে বিনামূল্যে পেয়ে গিয়ে এদের মধ্যে কোন Seriousness আসছে না। এ আমার অভিজ্ঞতাও বলছে।যে কথা কানের কাছে কাউকে বছরের পর বছর বলেছি, সে শোনেনি। আজ সে ১০,০০০ খরচ করে সেই একই সিদ্ধান্ত,"কি শুনলাম,কি শুনলাম" বলে গ্রহণ করছে।দাম দিয়েছে যে!! আমাকে কাজের ধারা বদলাতে হবে।দেখছি।


ব্রহ্মচারী:- ঠিক আছে মহারাজ।



মহারাজ ফোনটা কেটে দিলেন।


ব্রহ্মচারী মনে মনে ভাবতে লাগলো, মহারাজ গলার, শরীরের বিশ্রামের জন্য ক'দিনের জন্য মাত্র ঋষিকেশে গেছেন। কিন্তু সেখানেও তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। ভাবনা সেখানেও, "কিভাবে সকলের পরমার্থ হয়।" না আছে ঠিকঠাক ঘুম, না আছে খাওয়া-দাওয়া। সর্বক্ষণ ভেবে চলেছেন এই বেদান্ত, উপনিষদকে কিভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে  সবশক্তি দিয়ে, যত তাড়াতাড়ি, বেশী করে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাদের কল্যাণে। কারণ হিসাবে বলেন," দেহ তো ভাঙছে...ভাঙুক। যদি দেহটা টপ করে বসে যায়, তাহলে এই কাজটা বেশিদূর এগোনা সম্ভব হবে না। খেটে নিই।মায়ের দেহ মায়ের কাজেই যাক্।



কত প্রেম...!!!!,  কতটা ডেডিকেশন...!!!! থাকলে এ সম্ভব। কি যে বুঝেছেন!কে জানে?


মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম,  হে ঈশ্বর এই মানুষটির মতো এত... সহ্য শক্তি!!! এত.... ধৈর্য‍্য!!!এত... প্রেম!! এতটা.... নিঃস্বার্থপরতা..!! এতটা.... Dedication..!!! আমাদের মধ্যেও তুমি তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও, যাতে মহারাজের যোগ্য হাত হয়ে এই মহত্তর কাজ দ্রুতগতিতে এগোতে পারি।