July 23, 2024 - BY Admin

মূর্তিহীনের মূর্তি

গুরুপূর্ণিমার দিন বিকেলে আমরা একটা গোপন আয়োজন করে, বিকেলে ৪টে নাগাদ, তিনজনে পাশের ঘরে বসে আছি। মহারাজকে surprise দেওয়া হবে, এমন ইচ্ছে আমাদের।


চা হাতে মহারাজ তাঁর প্রচলিত ভঙ্গিমাতে এলেন। গল্পের ছলে একটু তর্ক চলল। ওনার দীক্ষা ও সন্ন্যাস বিষয়ে কথা হলো। সেটা ব্যক্তিগত বলে এখানে বলছি না। জ্ঞান পীঠের অধ্যাত্ম এমনই।চলতে, ফিরতে, বসতে, উঠতে আপনাকে তৈরি থাকতে হয়, মনকে তোলার জন্য। সহজেই বোঝা যায় সামনের ব্যক্তির সচেতনতা, সন্তুলন কোথায় রয়েছে কারণ সেজেগুজে যে ধর্ম তা এখানে নেই। তিনিও স্বতস্ফূর্ত, তাই যারা থাকবে তাদেরও এমন হতে হবে।

যাইহোক, শেষে গুরু বিষয়ে কথা উঠলো। বললেন, দেখো, সনাতন গুরুর কোনো লৌকিক রূপরেখা রাখেনি। চোর হোক্, সাধু হোক্, শিশু, স্ত্রী, পুরুষ, যে জাতের হোক্ না কেন, গুরু সব রূপে থাকতে পারে, এটা ভারত যেন হাড়ে হাড়ে জানে।

দেখো না, সব দেবতার রূপ দিলো। কিন্তু,গুরুর কোনো specification করলো না। কারণ, সব রূপে গুরু হতে পারেন। দুর্গার দশ হাত, জটা মাথায় শিব, ক্ষিপ্র সিংহ, গণেশ মোটা, কালী কালো। গুরুকে বলল, ব্রহ্মানন্দ, পরম সুখদ, কেবল জ্ঞানের মূর্তি। এবার সুখ, জ্ঞানের কী প্রতিমা বানাবে? যেখানে দ্বন্দ্ব নেই, সেখানেই গুরু। আকাশের মত, সব শাস্ত্র যে চৈতন্যকে খুঁজছে, তাই গুরু। এবার আকাশের, চেতনার কোন‌্ বিগ্রহ বানাবে? 'এক' -সবসময় আছে, শুদ্ধ, যার নড়াচড়া নেই, বুদ্ধির কেন্দ্রে যা, তাই গুরু। এবার স্বচ্ছতার কি রূপ দেবে? বুদ্ধি থেকে জীবত্ব শুরু। তার কেন্দ্রে কে যাবে? সব ভাবের আওতার বাইরে, সব বিশিষ্টতা ছাড়া যা, তাই সদ‌্গুরু। এটাই সনাতনের এক অদ্ভুত সৌন্দর্য্য। দেবতার থেকেও মানবীয় উচ্চতাকে উপরে রেখেছে। গুরুকে দেবতা বা ইষ্টের আগে দেখেছে। নির্গুণকে সগুণ আধারে প্রণাম করেছে।


এমন বলে সব শান্ত করে গাইতে গাইতে তিনি বাগানে চললেন।এভাবেই চলে জ্ঞান পীঠের রোজকার মনন ও নিদিধ্যাসন।