মানুষের কল্যানে বেদান্ত এবং ভারতীয় শাস্ত্রকে ছড়িয়ে দিতে আশ্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ গঠনমূলক Project করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমস্ত আশ্রমিকবৃন্দ মিলে। কিন্তু এই গঠনমূলক কর্ম করার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু এই অর্থ কোথা থেকে আসবে? আশ্রমিকরা তো আর কোন চাকরি করে না!!! আশ্রমের ভক্তদের অনুদানের মধ্য দিয়েই এই আশ্রম চলে এবং তা মানুষের কাজেই মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়। এই যে আশ্রমের এত কাজ হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্য, তার জন্য যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, এই অর্থ বহু মানুষ আমাদের অনুদান করছে সেই জন্য তাদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। তাই আমাদের এই আর্থিক সংকটের কথা কিছু ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করলাম এবং তাদেরই মধ্যে থেকে একজন ভক্ত আশ্রমের এই বিশেষ গঠনমূলক কাজে আর্থিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসলেন। এই ভক্তকে শুধুমাত্র ভক্ত বললে একটু কমই বলা হবে। ইনি হলেন পূজনীয় মহারাজ এর কাছ থেকে দীক্ষা মন্ত্র পাওয়া মহারাজের শিষ্যা। তাই এই শিষ্যার কথাতেই, আমরা এই Project-এর কাজে হাত দিলাম।
আমরা যখন এই Project-এর অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছি, তখন হঠাৎ একদিন ঐ শিষ্যা ফোন করে বলে তিনি আশ্রমকে ওই টাকাটা দিতে পারবেন না। তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তার কিছু নিকট আত্নীয় ও খুব কাছের লোক আশ্রমকে টাকাটা দিতে বাধা দিচ্ছে। এই কথা শুনে আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। Project এর কাজ যে এতটা এগিয়ে গেল, এত প্রচেষ্টা সবই কি তাহলে মিথ্যা হয়ে যাবে!!!! তাহলে কি এতটা এগিয়ে যাওয়ার পর তীরে এসে তরী ডুববে!!! তাহলে কি মানুষের কল্যাণে মহারাজের দেওয়া বেদান্তের বাণী, জীবন বাঁচার Practical application মানুষের কাছে আমরা এই ভাবে পৌঁছে দিতে পারবোনা? কি করে Project টা উদ্ধার হবে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
একই সঙ্গে আশ্রমের একটি spiritual Tour-এ তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সেই Tour-ও তিনি Cancel করে দেন এবং কারণ হিসাবে তিনি বলেন যে, তার কাছের লোক গুলো তাকে একা যেতে দিতে চাইছেন না। Tour-এর পুরো টাকাটা উনি আমাদের Advance করে দিয়েছিলেন। যেহেতু উনি Tour-এ যাবেন না, তাই টাকাটা return করার জন্য আমরা ওনাকে ওনার Bank Detail পাঠাতে বলি Whatsapp-এ। কিন্তু উনি টাকাটা ফেরত নিতে রাজি হলেন না এবং সেইসঙ্গে বললেন কেউ যদি টাকার problem-এ যেতে না পারেন তাহলে ওই টাকায় যেন ঐ ব্যক্তি কে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই পুরো ঘটনাটা এক ব্রহ্মচারী, পূজনীয় মহারাজ কে জানায় এবং মহারাজ শোনার সঙ্গে সঙ্গে খুব বিরক্ত হলেন। মুখে যেন অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। এই ঘটনার পর ব্রহ্মচারীর মহারাজের ওপর সন্দেহ হলো। ব্রহ্মচারী ভাবলেন ওই শিষ্যা টাকাটা দিতে পারল না বলেই, মহারাজ ওই শিষ্যার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। এতদিন তো অসন্তোষ প্রকাশ করেন নি। তাহলে মহারাজকে যে দিতে পারবে সেই ভালো হবে, আর যে দিতে পারবে না সেই কি খারাপ হয়ে যাবে? এই সন্দেহজনক প্রশ্নগুলো ব্রহ্মচারীর মনের ভেতরে ঘুরতে লাগলো। ব্রহ্মচারীর মনের ভেতরটা কি যেন একটা হচ্ছিল বলে বোঝাতে পারবে না।
মহারাজ সবসময় বলেন কখনো তোমাদের মনের মধ্যে যে কোন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব বা সংশয় থাকলে, আমাকে জিজ্ঞাসা করবে এবং বিষয়টা পরিস্কার করে নেবে। তাই আমি মহারাজের কাছে গিয়ে বিষয়টার Clarity পাওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম।
মহারাজ বললেন, উনি টাকা না দেওয়ার জন্য আমি অসন্তুষ্ট হইনি। টাকা দেওয়া বা না দেওয়া কোন matter নয়। আমার অসন্তোষ প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হল- "ওই ব্যক্তি স্বাধীন নয়"। আমি যে এত কাজ করছি, লেকচার দিচ্ছি, এত মানুষের সাথে কথা বলছি, তার একটাই উদ্দেশ্য "স্বাধীনতা বা মুক্তি"। উনি, সত্য কি, তা জানেন। তবুও সাহস করছেন না। অন্যের কাছে নিজের স্বাধীনতাকে বিক্রি করে দিলেন অর্থাৎ যা মিথ্যা তার দাসত্ব মেনে নিলেন, ঘোর বন্ধনে আছেন। আমি বোঝানোর পরেও উনি নিজের গুরুকে অগ্রাহ্য করলেন। এই পৃথিবীতে কোন ব্যক্তির কেউ যদি হিত চায়, তিনি হলেন ওই ব্যক্তির "গুরু"। "গুরু"-ই মাত্র পারে তার শিষ্যকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত করতে। তার কারণ, গুরু কখনোই শিষ্যের কাছ থেকে কোন কিছু চায় না, কোন কিছু আশা করে না। শুধুমাত্র একটাই শেষ আশা থাকে, যেটা তাঁর শিষ্যের জীবনের মুক্তি। এই পৃথিবীতে যদি কোন যথার্থ সম্পর্ক থেকে থাকে তা হল প্রকৃত গুরু এবং শিষ্য এর সম্পর্ক। বাকি সম্পর্ক গুলো সবই চাওয়া-পাওয়ার সম্পর্ক, স্বার্থপরতার সম্পর্ক, যা তোমাকে শুধুমাত্র, শুধুমাত্র বন্ধন দেবে। আর তোমরা জানো, দান আমি ব্যক্তিগতভাবে চাইনি।অনেকটা খাটনি হয়তো বৃথা যাবে। তার থেকেও বড় ব্যাপার, যারা আমার কাছে আসছে, তাদের ভিখারী দেখতে রাজি। তবুও কাপুরুষ যেন কেউ না হয়। আমার বিরক্তি ওখানে। তোমরা তো ঘর ছেড়ে এসেছো। কখনো কি ভৌতিক কিছুর আশা করেছি তোমাদের থেকে? যেখানেই তোমরা মায়ার কাছে ঝুঁকেছো, সেখানেই বিরক্ত হয়েছি। এক্ষেত্রেও তাই। তোমরা আর যাই হোক, যে যতটা বুঝেছো সঠিক বলে, তার সঙ্গ ছেড়ো না।