সন্তান কি মানুষ হবে না?
অদ্বৈত জ্ঞান পীঠ আশ্রম, দিয়াড়া
তারিখ: ৩০.০১.২০২২
রবিবার।
যোগবাশিষ্ঠের ক্লাস এই সবে মাত্র শেষ হলো.. ক্লাসের পর মহারাজ নিচের ঘরে এইদিন ভক্ত সঙ্গে বসেন, নানান বিষয়ে আলোচনা হয়।
এমনই এক সন্ধ্যে। এক দম্পতি এসেছেন প্রথমবার, ইউটিউবে মহারাজের বিভিন্ন ভিডিও দেখে। তাদের পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়ে, আশ্রমের বিষয়ে নানান কথা হতে হতে, হঠাৎই স্ত্রীলোক প্রশ্ন করলেন, মহারাজ আমার একটি বছর ১৪- র কিশোরী মেয়ে আছে, ভীষণ অবাধ্য! ওকে সামলে, বাড়ির কাজ করে নিজেকে সময় দিতে পারছি না। অথচ আপনার ভিডিও দেখতে দেখতে মনে হচ্ছে, যে জীবন আমরা যা বাঁচছি, তা পশুবৎ জীবন! সমাজের সেবা, অন্যের জন্য কিছু করবো কিভাবে যদি বলেন, দয়া করে।
মহারাজ: কি করবেন আবার! একটি প্রাণকে এনেছেন পৃথিবীতে, তার দায়িত্ব নিন। সন্তান মানুষ করুন। আপনার সন্তানকে তো রেখে যাবেন সমাজে, তাকে যদি সঠিকভাবে তৈরিই না করতে পারলেন, তো কিসের সেবা?
ভক্ত: কিন্তু ও তো আমার একটা কথাও শুনতে চায় না মহারাজ!
মহারাজ: শুনবেই বা কেন? কি মূল্যবোধ ওকে আমরা দিচ্ছি, যে ও আমাদের কথা মতো চলবে?
যখন কথা শুনছে না, দিন খাবার বন্ধ করে!
ভক্ত: দিইই তো... তাও তো শুনছে না কিছুতেই!
মহারাজ: শুনছে না কারণ ও জানে ওকে এক বেলা খেতে না দিলে, পরের বেলা দ্বিগুণ তোয়াজ করে খাওয়ানো হবে! ওর হাতে নিশ্চয়ই এতদিনে একটা ফোন চলে এসছে? যে নেট প্যাকটা ইউজ করে সে রাত জেগে ফেসবুক চালায়, সেই নেট প্যাকের টাকাটা তার হাতে আসে কি করে? কে দেয় টাকা, আপনারা ছাড়া!
আমরা চাইছি সন্তান মানুষ হোক। অথচ এই সন্তানই যখন গিয়ে কোনো সাধুর আখড়ায় বসে, আমরা তাকে চোখ রাঙাই, ভয় দেখাই। আবার আমরাই পার্টিতে বিয়ার খেয়ে উন্মত্ত হয়ে নাচি! আর ভাবি,আমার সন্তান একদিন আমার গর্ব হয়ে দাঁড়াবে! একে মূর্খতা ছাড়া আর কি বলা যায়!
কোন সঠিক মূল্যবোধ আছে জীবনে?
সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে হলে, তাকে মানুষ করতে হলে, আগে নিজেকে জানতে হবে বুঝতে হবে, মানুষ হতে হবে। তবে না সন্তান শিখবে আপনার থেকে। আপনার জীবনে যদি এমন কিছু নাইই থাকে যা দেখে আপনার সন্তান কিছু শিখতে পারে, তবে সে খামোকা আপনাকে পাত্তা দিতে যাবেই বা কেনো! সে পাত্তা দেবেনা.. এই কারণেই আজকাল সন্তানরা বাবা মাকে বুড়ো বয়সে তাদের বোঝা বলে মনে করে!
নিজে আগে কিছু জানুন, বুঝুন, সন্তানকে তারপর কিছু শেখান, সে শিখবে। আপনি যদি আপনার ১৪ বছরের সন্তানকে এখন সঠিক মূল্যবোধ না দিতে পারেন, তবে ২৪ বছর বয়সে ও কি করবে?
এখনো ও financially আপনার ওপর dependent! ওকে এখন থেকে ঠিক ঠিক মূল্যবোধ দিন, যাতে ওকে জগতের ওপর depend করতে না হয়! নিজে গীতা পড়ুন, উপনিষদ্ পড়ুন, আশ্রমে আসুন, যোগবাশিষ্ঠের ক্লাস করুন, বুঝুন আর আপনার সন্তানকেও বোঝান। প্রয়োজনে বকে মেরে হলেও বোঝান! এখন থেকে যদি ওকে ঠিক ভুলের পার্থক্য করতে না শেখানো হয়, তবে ও সমাজের মার থেকে বাঁচতে পারবে না!
একটি প্রাণ কে যখন এনেছেন পৃথিবীতে, তখন আপনার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। যদি প্রেম থাকে, তবে দায়িত্ব নিন.. সমাজ সেবা এভাবেই হয়ে যাবে।