September 04, 2023 - BY Admin

সাধকের ত্যাগ

আজ আর কোন প্রশ্ন নয়, মহারাজের সাথে আলোচনা করতে যাবো একটা বিষয় নিয়ে, তা হলো- সাধকের ত্যাগ।


আমি: সাধকদের মধ্যে একটা জিনিস লক্ষ্য করা যায় যে, তারা দেখে,সম্ভোগের আনন্দ কিছুক্ষণের আনন্দ। সুতরাং,ত্যাগ করে দাও। টাকা দিয়ে কোন কিছু কিনে মজা পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু তা permanent নয়।তাই,তারা ত্যাগ করে দেয়। এখানে আমার কথা হলো,ব্যক্তি যদি বুঝে যাচ্ছে যে, কোন জিনিস থেকে permanent আনন্দ পাচ্ছি না এটা বুঝে গিয়েও তো সে ঐ জিনিসটি পূর্ণ use করতে পারে!


মহারাজ: হ্যাঁ! আর সাধক তো এই ত্যাগের কথা বলেই না। যারা বোঝাতে চেয়েছেন তারা হয়তো বোঝাতে পারেননি বা আমরা বুঝতে পারিনি। 

তুমি ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল ম্যাচ দেখছো, মা বলছে 'খেয়ে নে'। তোমার পেটে খিদে আছে কিন্তু তা সত্ত্বেও বলছো- "পরে"। সাধক এমন কিছুতে মত্ত যে জগতকে passively ত্যাগ করে দেয়। মাতালের সামনে গিয়ে তুমি যদি বলো - "এই নে! ভাত খেয়ে নে", মাতাল এত মত্ত যে সে চাইলেও খেতে পারবে না। ত্যাগ তখন স্বতঃস্ফূর্ত।আর বিষয়টা এমন নয় যে," permanent আনন্দ নেই,তাই ত্যাগ।" সেভাবে দেখলে জগতের কোনও বিষয়ই স্থায়ীভাবে মজাদার নয়।তবে,বাঁচবে কি করে? সাধক যে বিষয়ের যতটা প্রয়োজনীয়তা,ততটা অবশ্যই নেয়। সে অকারণ স্বপ্নের পাহাড় বানায় না।সে স্থায়ীসুখের আশাই করে না।


যে ত্যাগ জোর করে করা হয়,সে তো একদম টিকবে না। সেই ত্যাগে frustration আসবে।তাতে কোন গভীরবোধ নেই। কারণ সে বইতে পড়েছে বা অমুক ব্যক্তির কথা শুনেছে। সাধকের ত্যাগ সব সময় passive ত্যাগ। যেমন ধরো - আগে সন্ন্যাস হতো, কারণ একটা prestigious job এর মত ছিল। সবাই "হ্যাঁ! সাধুবাবা", "হ্যাঁ! সাধুবাবা" বলবে, প্রণাম করবে! 

কিন্তু,এখন তো সেটা হয় না। এখন তো আর কেউ সাধুদের অত পাত্তা দেয় না। তাই সন্ন্যাসও কমে গেছে। লোকে সহজেই অনেক কথা বলে-"সন্ন্যাস তো পলায়ন!!", এমন করে বলে যেন,তারা খুব বীর।সংসারে লড়তেই তাদের জন্ম।কালই যদি সন্ন্যাসে বড়সর টাকার অঙ্ক জুড়ে যায়,সব ভোল বদলে যাবে।এটাকে "শিবসূত্র" বলেছে - কল্পনাশক্তি যখন তোমাকে চালাচ্ছে। কিন্তু, ত্যাগ যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হবে, ব্যক্তি বলবে আমি বিরাটকে দেখতে পাচ্ছি,ক্ষুদ্রতাতে কেন ফেঁসে থাকা? 

যেমন ধরো, এই যে  শ্রী রামকৃষ্ণদেবের খাবারের জন্য যে ভাত,ডাল, তরকারি, মাছ ইত্যাদি প্রয়োজন পড়তো, এতে কি পয়সা লাগেনি? কিন্তু উনি তো বলতে পারতেন টাকা দিয়ে কিনে এনেছে তাই - "চাই না"। কিন্তু যখন মাড়োয়ারী টাকা দিতে আসছে তখন বলছেন- "এতে অনর্থ হবে"। টাকা যখন কেউ অনেক জমিয়ে রেখে দেয়, তখন ঐ নিয়ে চিন্তা হবেই। তাঁর যে গভীর observation এবং পরম নির্ভরতার যে সুখ, তার সামনে দাঁড়িয়ে টাকাকে sacrifice করে দিলেন, যেন ওয়ার্ল্ড কাপ চলছে সামনে। এইভাবে ত্যাগ সিদ্ধ হয়।


আমি: তার মানে জগৎ থেকে যে আনন্দ পাচ্ছি সেটা তো পাচ্ছিই। কিন্তু এর থেকেও বড় আনন্দ কিছু আছে।


মহারাজ: বড়-ছোট নয়। এখানে দুটো approach । ত্যাগীর আনন্দ অর্থাৎ পেট ভরে গেছে আর ভাত চাই না, সে কি তাহলে অতটা ভাত ত্যাগ করলো? কেউ যদি বলে- "আমি বিরাট হয়ে গিয়েছি"।ধরো তাকে তুমি বিয়ে করার জন্য বললে,তখন সে হয়তো বলবে যে, আমি সবার সাথে সম্পর্কিত, কেন একটামাত্র সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ থাকবো? এটা একটা  approach। 

অন্যটা হলো - তুমি আগের দিন বলেছিলে যে, "জগৎটা ধোঁকা" অর্থাৎ প্রত্যেকে সেই ছোট ছোট আনন্দ খুঁজছে কিন্তু কোন "একটাতে দাঁড়িয়ে যাবো না"। এই দুটোর সূত্র কিন্তু একই।


বুঝলে?

আমি: হুম।