April 19, 2022 - BY Admin

হার মানা-ই মৃত্যু

ছোট্ট একটা গণ্ডি পেরিয়ে বৃহৎ এর স্বাদ নিতে কার না মন চায়। তবে, 'অসীমতা', 'অনন্ততা', 'মুক্ততা' এসব তাত্ত্বিক শব্দগুলোকে জীবনে আনতে হলে জীবন কিন্তু সত্যিই এর চড়া দাম চায়। আত্মা মাত্রই মুক্ত স্বভাব.. প্রকৃতি বন্ধনদাত্রী। এই দুই এর খেলায় আমার প্রায়ই মনে হয়, কোথাও যেন.. এই দুই এর মাঝেই লটকে পড়ছি বারবার। প্রকৃতি যেন তার gravitation power দিয়ে আমার পা দুটি ধরে বেশ করে নিচের দিকে টানছে, আর হাত দুটি ধরে চেতনা বলছে আমার, জোরে ওঠ্। 



এমনই এক পরিস্থিতি ঘটেছিল, যেদিন প্রথম কথা বলতে এসছিলাম মহারাজের সাথে.. 

এখানে বলে রাখা ভালো, ইতিমধ্যেই জ্ঞান পীঠে এসে ৩ টি উপনিষদ্ ক্লাস এবং দুর্গা পূজায় প্রায় প্রতিদিনই  অধিকাংশ সময় আশ্রমে কাটানো, সকলের সাথে হাত লাগিয়ে কাজ করা, অল্প বিস্তর আশ্রমিকদের কারোর কারোর মুখ চেনা, নাম জানা আমার হয়ে গিয়েছে। তবে মহারাজের কাছে মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করবার কিংবা একান্তে মত জ্ঞাপনের সুযোগ হয়ে ওঠেনি এখনও। আজ তা বলবার জন্যই জ্ঞান পীঠে আসা।



মনে আছে, মহারাজ এসে বসতেই তন্ত্র, জপ, দীক্ষা এসব নিয়ে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন পাশে বসা এক ভক্ত। এদিকে আমার মনের অবস্থা তখন শোচনীয়। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙবার একেবারে চরমসীমা। কবে থেকে এই দিনটিরই অপেক্ষায় ছিলাম আমি, তা কেবল জগদীশ্বরেরই জানা!



তাই ভক্ত চলে যেতেই, মুহুর্ত ব্যয় না করে সরাসরি আমার উক্তি ছিল অনেকটা এরকম.... 

***********



আপনার ভিডিও দেখতে দেখতে প্রায়ই শুনি, আপনি বলেন মুক্তির জন্য চড়া দাম দিতে হবে। পারবেন দিতে?

আমি আজ জানতে এসেছি, কি দাম চান আপনি! দাম দিতে আমি প্রস্তুত..




হয়তো কিছুটা আবেগের বিহ্বলতা লুকিয়ে ছিল এই বিবৃতির মধ্যে.. তবে এর গন্তব্য ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট।

 


ত্যাগ ছাড়া যে শান্তির জন্য অন্য কোন গতিই নেই, তা জীবন দুই হাতে ধরে একেবারে থাবড়ে থাবড়ে আমায় তা আগে ভাগেই বুঝিয়ে দিয়েছিল। তবে বারংবার মনে হতো, জীবনই যদি শিখবো তবে তা এমন কারুর কাছেই শিখব.. যিনি প্রকৃতই জীবনমুক্ত, যিনি এক এক করে সব বন্ধনকে কাটার মন্ত্র আমায় শেখাতে পারেন। তাই উত্তর পেতে আর খানিকটা সংশয়ের অবসান ঘটানোর ক্ষিদেই আমায় জ্ঞান পীঠ এবং মহারাজ অবধি টেনে নিয়ে এসেছিল।



দেখলাম, দেরী না করে মহারাজও যেন গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সাথে পাল্টা প্রশ্ন আমায় করলেন।

কি দাম দিতে পারবেন আপনি? যাঁরা আপনাকেই মারবে তাঁদের জন্য ঘষতে ঘষতে নিজেকে শেষ করে দিতে পারবেন?

সকাল থেকে রাত অবধি একটির পর একটি ইঁট সাজিয়ে ঘর বানাতে হবে নিজের হাতে, যাতে আপনারই মত কেউ এসে এই কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, আর রাতে দুটো মুড়ি চিবিয়ে গীতা হাতে বসতে হবে নিজের সাথে।

এভাবেই একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে, বিনিময়ে শুধু মার জুটবে কপালে। তবুও করে যেতে হবে... পারবেন???



যদি পারেন, তবে স্বচ্ছন্দ্যে আসুন। অন্য কোথাও যাবেন কেন? জানিনা তাঁর কি ইচ্ছা.. এতো তাড়াতাড়ি সব হচ্ছে যে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তবে, হয়তো এখানেই ব্রহ্মচারীনীদের জন্য খুব শীঘ্রই কিছু একটা ব্যবস্থা হবে। আসুন কাজ করুন। নিজে তৈরি হন, অন্যকে তৈরি করুন।



সেদিন এক মুহুর্ত দেরী না করেই বলেছিলাম, নিশ্চয়ই। 


তবে আজ বুঝি, গড়া অতটা সহজ নয়, তবে 'অসম্ভব'-তা আমি মানি না। 

প্রতি মুহূর্তে ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলছে এই প্রকৃতিতে.. নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়তে হলে প্রতি মুহূর্তে 'যুদ্ধং দেহি' হতে হয়

নিজেরই প্রকৃতির বিরুদ্ধে! বিপুল সৈন সাজিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হয়, লড়তে হয়, পড়তে হয়, ভাঙতে হয়, উঠে দাঁড়িয়ে 'কিচ্ছু হয়নি' বলে আবার এগিয়ে পড়তে হয়! 


মহারাজ আমাদের বলেন, এমন কোন বিন্দু নেই, যেখানে গিয়ে এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। তাই লড়তে হবে, পড়তে হবে, ভাঙতে হবে, প্রয়োজনে মরতেও হবে.. তবে হারা not allowed.. 

কারণ অনন্ততার সামনে হার মানাই মৃত্যু!